April 29, 2025
সুজানগরের আগর-আতর শিল্প সংকটের মুখে

সুজানগরের আগর-আতর শিল্প সংকটের মুখে

মার্চ ১৫, ২০২৫

মৌলভীবাজারের বড়লেখার সুজানগর গ্রাম বহুদিন ধরে আগর-আতরের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত। একসময় এই ব্যবসা শুধু সুজানগরে সীমাবদ্ধ থাকলেও এখন আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, কাঁচামালের সংকট ও রপ্তানিতে কম প্রণোদনার কারণে আগর-আতর শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে।

শিল্পের বর্তমান অবস্থা

সুজানগরের আগর-আতর সম্প্রতি জিআই (ভৌগোলিক নির্দেশক) পণ্যের স্বীকৃতি পেলেও শিল্পটি নানা সমস্যার সম্মুখীন। স্থানীয় ব্যবসায়ীদের মতে, ডিসেম্বর থেকে মে পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে আগর-আতর উৎপাদন চলে। এই সময় আগর সংগ্রহ করা সহজ হয়। তবে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক ব্যবসায়ী উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছেন।

ব্যবসায়ী আবদুল কুদ্দুছ জানান, গ্যাসের দাম বৃদ্ধির কারণে তিনি আগর-আতর উৎপাদন সীমিত করেছেন। তিনি মূলত সৌদি আরব ও কুয়েতে আগরকাঠ ও আতর রপ্তানি করেন। প্রতিটি চালানে তিনি পাঁচ থেকে সাত লাখ টাকা আয় করেন।

কাঁচামালের সংকট ও সরকারি নিলাম

সুজানগরের অন্যতম পুরোনো আগর-আতর ব্যবসায়ী আনছারুল হক জানান, ৩০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে এ শিল্প টিকে আছে। বর্তমানে সুজানগরে প্রায় ৩০০টি ছোট-বড় আগর-আতর ব্যবসা রয়েছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন আগরবাগান থেকে কৃত্রিমভাবে আগর সংগ্রহ করা হয়, যেখানে গাছে পেরেক মেরে বিশেষ পদ্ধতিতে আগর তৈরি করা হয়।

বন বিভাগের উদ্যোগে সামাজিক বনায়নের আওতায় আগরবাগান গড়ে তোলা হলেও দীর্ঘদিন ধরে এসব গাছের নিলাম বন্ধ রয়েছে। ২০১৬ সালে বন বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণে ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স নিলেও এখন তারা আগরকাঠ সংগ্রহ করতে পারছেন না। ফলে কাঁচামালের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে।

রপ্তানি সংকট ও প্রণোদনার দাবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আগর-আতর রপ্তানিতে ৮% প্রণোদনা নির্ধারণ করেছে। তবে রপ্তানিকারকদের মতে, উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় এ প্রণোদনা যথেষ্ট নয়। আগর-আতর ম্যানুফ্যাকচারার্স এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কবির আহমেদ চৌধুরী জানান, কয়েক বছর আগেও বছরে ১৫০ কোটি টাকার আগর-আতর রপ্তানি হতো, যা এখন ১০০ কোটির নিচে নেমে এসেছে।

শিল্পের টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ

এ শিল্পে প্রত্যক্ষভাবে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ কাজ করে, পরোক্ষভাবে এই সংখ্যা দুই লাখেরও বেশি। শ্রমিকদের মজুরি ও উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় শিল্পটি টিকে থাকার জন্য সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।

বর্তমানে এ শিল্পে প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম ৩০.৫০ টাকা, যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। ব্যবসায়ীদের দাবি, চা-শিল্পের মতো আগর-আতর শিল্পের জন্যও প্রতি ঘনফুট গ্যাসের দাম ১১.৯৩ টাকা নির্ধারণ করা উচিত।

সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, ২০১২ সালের আগর নীতিমালা অনুযায়ী বন বিভাগের পক্ষ থেকে সামাজিক বনায়নের আওতায় আগরবাগানের গাছ কর্তনের বিষয়ে প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।

সুজানগরের ঐতিহ্যবাহী আগর-আতর শিল্প সংকটের মুখে পড়েছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, কাঁচামালের সংকট ও কম প্রণোদনার ফলে এই শিল্প হুমকির মুখে। এ শিল্পকে বাঁচাতে হলে কাঁচামাল সংগ্রহের পথ সুগম করা, নিলাম চালু করা এবং গ্যাসের দাম কমিয়ে বিশেষ সহায়তা প্রদান করা জরুরি।

Leave a Reply