
জাতীয় নির্বাচনের জন্য কী প্রস্তুতি লাগে ইসির
অন্তর্বর্তী সরকার আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন সম্পন্ন করতে চায়। নির্বাচন কমিশন (ইসি) বলছে, সময়মতো নির্বাচন আয়োজন করতে হলে অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তুতি শেষ করতে হবে। ইতিমধ্যে ইসি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে কমিশনের কী কী প্রস্তুতি প্রয়োজন, তা অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগতে পারে।
নির্বাচনের প্রস্তুতি: কী কী করতে হয়?
ইসির কর্মকর্তাদের মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতির মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ রয়েছে:
- ভোটার তালিকা তৈরি ও হালনাগাদ
- ইসির সাংবিধানিক দায়িত্ব অনুযায়ী, প্রতিবছর ২ জানুয়ারি থেকে ২ মার্চের মধ্যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ করা হয়।
- ২০২৪ সালের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২ মার্চ প্রকাশ করা হয়েছে।
- নতুন ভোটারদের অন্তর্ভুক্ত করতে হালনাগাদ কার্যক্রম চলমান, যা জুন নাগাদ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
- যদি নির্বাচন তার আগেই হয়, তবে নতুন ভোটার অন্তর্ভুক্ত করতে আইনে সংশোধনী আনতে হতে পারে।
- সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ
- নির্বাচন আয়োজনের আগে ইসি চাইলে সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে পারে।
- আদমশুমারি অনুযায়ী সীমানা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।
- একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে সীমানা পুনর্নির্ধারণে দেড় মাস ও দ্বাদশ নির্বাচনের আগে চার মাস সময় লেগেছিল।
- ভোটকেন্দ্র স্থাপন
- সাধারণত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে ভোটকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
- ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে কেন্দ্র চূড়ান্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।
- রাজনৈতিক দল ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন
- নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়।
- কাগজপত্র যাচাই-বাছাই, মাঠপর্যায়ে যাচাই ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে কয়েক মাস সময় লাগে।
- দেশি পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর নিবন্ধনও এ প্রক্রিয়ার অংশ।
- নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ
- ব্যালট বাক্স, ব্যালট পেপার, ভোটার তালিকা, অমোচনীয় কালি, সিল, স্ট্যাম্প, খাম, কলমসহ বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ করতে হয়।
- ব্যালট পেপারের কাগজ রাষ্ট্রায়ত্ত কর্ণফুলী পেপার মিল থেকে নেওয়া হয়, আর ব্যালট ছাপা হয় সরকারি ছাপাখানায়।
- দরপত্রের মাধ্যমে অন্যান্য সামগ্রী কেনার প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ।
- নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ
- রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তারা তফসিল ঘোষণার সময় নিয়োগ পান।
- সাধারণত জেলা প্রশাসক (ডিসি) রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও ইসির কর্মকর্তারা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন।
- প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণও নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
- নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষা
- পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, আনসারসহ বিভিন্ন বাহিনী আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করে।
- সশস্ত্র বাহিনী স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকে।
- ইসি বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্দেশনা দেয়।
নির্বাচনী পরিবেশ ও নির্বাচন কমিশনের আস্থা
নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নির্বাচন কমিশনের ওপর জনগণের আস্থা ও সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা।
সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের মতে:
- ভোটার তালিকা ও আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে বেশি সময় লাগে, তবে অন্যান্য প্রস্তুতি তুলনামূলকভাবে দ্রুত সম্পন্ন করা সম্ভব।
- নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা ও কার্যকরী ভূমিকা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ।
- নির্বাচনী পরিবেশ তৈরির দায়িত্ব শুধু ইসির নয়; সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
- তফসিল ঘোষণার পর সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা ইসির দায়িত্ব।
চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
✅ বিশ্বস্ত নির্বাচন কমিশন: ইসিকে নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।
✅ নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করা: রাজনৈতিক দল ও সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।
✅ প্রশাসনিক দক্ষতা: ভোটার তালিকা হালনাগাদ, আসন সীমানা নির্ধারণ ও নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহ সঠিক সময়ে সম্পন্ন করতে হবে।
✅ আইনশৃঙ্খলা: নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ইসি ইতিমধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে। তবে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা এবং নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা জরুরি। আসন্ন নির্বাচন কেমন হবে, তা নির্ভর করবে এসব বিষয়ের ওপর।