July 19, 2025
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাবে কে

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মৃত্যুর মিছিল ঠেকাবে কে

মার্চ ১৪, ২০২৫

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এটি কেবল দুর্ঘটনা নয়; দুর্বল তদারকি, নিম্নমানের সরঞ্জাম এবং অসচেতনতার সম্মিলিত ফল। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর গাফিলতি ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অভাবে এই ঝুঁকি দিন দিন আরও ভয়াবহ হয়ে উঠছে।

দুর্ঘটনার কারণ ও বিশ্লেষণ

১. গ্যাস লিকেজ ও নিম্নমানের সরঞ্জাম:

  • লিকেজ হলেই আগুনের সংস্পর্শে বিস্ফোরণের আশঙ্কা থাকে।
  • নিম্নমানের রেগুলেটর, পাইপ ও ভাল্‌ভ ব্যবহারের কারণে গ্যাস লিকেজ হয়।
  • মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারে উচ্চচাপে গ্যাস ভরার ফলে বিস্ফোরণের ঝুঁকি বাড়ে।
  1. ক্রস ফিলিং ও অননুমোদিত গ্যাস রিফিলিং:
    • এলপিজি কোম্পানিগুলো অত্যাধুনিক যন্ত্রের মাধ্যমে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরে, কিন্তু অনেক জায়গায় অনুমোদন ছাড়া হাতের সাহায্যে গ্যাস ভরা হয়, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
    • ক্রস ফিলিংয়ে ভাল্‌ভ বসানোর পদ্ধতি যথাযথ না থাকায় লিকেজের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  2. পরিবহন ও সংরক্ষণজনিত ত্রুটি:
    • সিলিন্ডার কাত করে রাখা, অযত্নে ফেলে রাখা বা পরিবহনের সময় ছুড়ে ফেলা সিলিন্ডারের কাঠামো দুর্বল করে দেয়।
    • রান্নার সময় চুলার পাশে সিলিন্ডার রাখলে অতিরিক্ত তাপে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
  3. গাড়ির জন্য মানহীন সিলিন্ডারের ব্যবহার:
    • বহু যানবাহনে অননুমোদিত ও নিম্নমানের সিলিন্ডার ব্যবহৃত হচ্ছে।
    • দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে সিলিন্ডারের অভ্যন্তরীণ ক্ষয় হয়, যা বিস্ফোরণের অন্যতম কারণ।
    • বিআরটিএর তদারকির অভাবে যানবাহনে নিম্নমানের গ্যাস সংযোগ অব্যাহত রয়েছে।

সরকারি তদারকির দুর্বলতা ও ঝুঁকি বৃদ্ধি

  • একটি মাত্র পরীক্ষাগার: বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে কেবল চট্টগ্রামে একটি পরীক্ষাগার রয়েছে, যা সারাদেশের সিলিন্ডার পরীক্ষা করতে সম্পূর্ণ অপ্রতুল।
  • নিয়ন্ত্রক সংস্থার উদাসীনতা: বিস্ফোরক পরিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দুই লাখের বেশি মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার হচ্ছে, অথচ কার্যকর তদারকি নেই।
  • নিরাপত্তা পরীক্ষার অনিয়ম: অনুমোদিত এলপিজি কোম্পানিগুলো নির্ধারিত সময় পর সিলিন্ডার পরীক্ষা করলেও বাজারের অনেক সিলিন্ডার এর বাইরে থেকে যাচ্ছে।
  • গাড়ির ক্ষেত্রে সঠিক পরিদর্শনের অভাব: সিএনজি ফিলিং স্টেশনে মানহীন সংযোগ ব্যবহৃত হলেও বিআরটিএ যথাযথ ব্যবস্থা নেয় না।

সমাধানের উপায় ও করণীয়

  1. সিলিন্ডার ব্যবহারের কড়াকড়ি নিয়ম ও মান নিয়ন্ত্রণ:
    • মেয়াদোত্তীর্ণ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার নিষিদ্ধ করতে হবে।
    • ক্রস ফিলিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
  2. নিয়মিত নিরাপত্তা পরীক্ষা ও সরকারি তদারকি বাড়ানো:
    • এলপিজি ও সিএনজি সিলিন্ডারের মান পরীক্ষার জন্য আরও পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে।
    • বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও বিআরটিএর সমন্বয়ে কঠোর পরিদর্শন চালানো উচিত।
  3. জনসচেতনতা বৃদ্ধি:
    • রান্নার সময় চুলার কাছ থেকে সিলিন্ডার দূরে রাখা ও নিয়মিত গ্যাস লিকেজ পরীক্ষা করা উচিত।
    • যানবাহনের জন্য অনুমোদিত ও সঠিক মানের সিলিন্ডার ব্যবহার নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
  4. আইন ও শাস্তির কঠোর বাস্তবায়ন:
    • অননুমোদিত সিলিন্ডার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
    • মানহীন রেগুলেটর ও পাইপ সরবরাহ বন্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।

গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা দুর্বল তদারকি ও অসচেতনতার কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে। এটি প্রতিরোধ করতে হলে কঠোর তদারকি, আইন প্রয়োগ, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও গ্যাস সংযোগ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। অন্যথায় এ ধরনের দুর্ঘটনা অব্যাহত থাকবে, যা মানুষের জীবন ও সম্পদের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

Leave a Reply