November 9, 2025
মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর মৃত্যু: নৃশংসতার চরম পরিণতি

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছরের শিশুর মৃত্যু: নৃশংসতার চরম পরিণতি

মার্চ ১৩, ২০২৫

মাগুরায় ধর্ষণের শিকার আট বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে, যা আমাদের সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরছে। বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) দুপুর ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়। চিকিৎসকরা জানান, শিশুটি একাধিকবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের শিকার হয়, শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

শিশুটির চিকিৎসা ও মৃত্যুর ঘটনা

৮ মার্চ সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসার জন্য সিএমএইচের প্রধান সার্জনকে প্রধান করে আট সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল।

সিএমএইচের পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ জানান, বৃহস্পতিবার সকালে শিশুটির দুইবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তার হৃৎস্পন্দন ফিরে এলেও দুপুর ১২টার দিকে আবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়। এবার আর সিপিআরের পরেও তাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। দুপুর ১টায় শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

ধর্ষণের ঘটনা ও আইনি ব্যবস্থা

শিশুটি ৫ মার্চ মাগুরায় তার বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গেলে রাতে ধর্ষণের শিকার হয়। এই ঘটনায় শিশুটির মা চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—ভগ্নিপতি সজিব (১৮), সজিবের ভাই রাতুল (১৭), তাদের বাবা হিটু মিয়া (৪২) ও মা জাবেদা বেগম (৪০)। বর্তমানে তারা পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।

প্রতিবাদ ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

মাগুরার এই নির্মম ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে। ধর্ষণ ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সংগঠন ও সাধারণ মানুষ বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে শিশুটির মৃত্যুর ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে এবং তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। সেনাবাহিনী যে কোনো প্রয়োজনে পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

সমাজের প্রতি আহ্বান

এই ঘটনা আমাদের সমাজ ব্যবস্থার দুর্বলতাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারিবারিক, সামাজিক ও আইনি কাঠামোকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। এই ধরনের ঘৃণ্য অপরাধের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে ভবিষ্যতে এমন নৃশংসতা বন্ধ করা সম্ভব হবে না।

এখন সময় এসেছে সমাজের প্রতিটি স্তরে সচেতনতা বৃদ্ধি ও শক্তিশালী আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা ও শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।

Leave a Reply