July 8, 2025
শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে: ড. ইউনূস

শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে: ড. ইউনূস

মার্চ ৬, ২০২৫

রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ

অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তাঁর শাসনামলে গুম, নির্যাতন এবং রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপর দমনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্টে বিক্ষোভ দমনে সেনাবাহিনী ও পুলিশের অভিযানে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হয়, যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।

বিচার ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে, এবং তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে ভারতের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত অবস্থায় রয়েছেন এবং নিজেকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করছেন।

গোপন বন্দিশিবির ও নির্যাতনের অভিযোগ

অর্থনীতিবিদ ও নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত একটি গোপন বন্দিশিবির পরিদর্শন করেছেন, যেখানে রাজনৈতিক বন্দিদের নির্যাতন করা হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। তিনি এটিকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন, এটি সাধারণ মানুষের কল্পনারও বাইরে।

দুর্নীতির তদন্ত ও বিদেশি সম্পদ

শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হয়েছে, যেখানে তাঁর আত্মীয় ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এই তদন্ত পরিচালনা করছে, এবং অভিযোগ রয়েছে যে, টিউলিপ বাংলাদেশে বিপুল সম্পদ রেখে গেছেন।

রোহিঙ্গা সংকট ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

মিয়ানমারের চলমান সংঘাতের ফলে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়ছে, যা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউনূস সরকার মিয়ানমারের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে, যাতে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি ‘নিরাপদ অঞ্চল’ তৈরি করে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের সুযোগ সৃষ্টি করা যায়।

সম্ভাব্য রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ

বাংলাদেশের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও ইউনূস সরকার বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, তবু তিনি স্বীকার করেছেন যে, সবাইকে শাস্তির আওতায় আনা সম্ভব নাও হতে পারে। কেউ বিচারের সম্মুখীন হবে, কেউ অধরাই থেকে যাবে।

এই রাজনৈতিক পরিবর্তন ও বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে শেখ হাসিনার বিচার ও সম্ভাব্য শাস্তি, রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া কেমন হবে, তা নির্ভর করবে ভবিষ্যতের কূটনৈতিক ও আইনি কার্যক্রমের ওপর। এছাড়া, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন মানবিক ইস্যু সামাল দেওয়া নতুন সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।

Leave a Reply