
চাঁদাবাজি ইস্যুতে বিএনপিকে ভোটে ঘায়েলের কৌশল
আগামী জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে চাঁদাবাজি ইস্যুকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করতে চাইছে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বীরা। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রনেতাদের দল এনসিপিও এ ইস্যুতে সরব। তারা বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে এক পাল্লায় মাপতে চাইছে এবং চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে।
বিএনপির অবস্থান ও অস্বস্তি
বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছেন, তারা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে কঠোর। তবে বারবার দলীয় নেতাকর্মীদের নাম চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ায় কিছুটা অস্বস্তিও রয়েছে।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বিএনপির বর্ধিত সভায় তৃণমূলের নেতারা দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার আহ্বান জানান। তারা বলেন, চাঁদাবাজি, দখল, ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। ৫ আগস্টের পর থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন এবং তিন হাজারের বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন, যার মধ্যে হাজারের বেশি স্থায়ী বহিষ্কৃত।
গাজীপুরে যুবদল নেতার চাঁদাবাজির ঘটনা ও রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
গত ২২ ফেব্রুয়ারি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায় যুবদলের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম পিন্টুর নেতৃত্বে ৪০-৫০ জন যুবক মুখ ঢেকে রামদা হাতে বাজার নিয়ন্ত্রণের ঘোষণা দেয়। এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হলে তাকে বহিষ্কার করা হয় এবং চাঁদাবাজির মামলা করা হয়।
এ ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আল্লাহ চাঁদাবাজিকে হারাম করেছেন। ভিক্ষা করা হালাল। তাই চাঁদাবাজি না করে ভিক্ষা করুন।”
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামও বলেন, “হাতবদল হয়েছে, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি।”
বিএনপির প্রতিক্রিয়া ও অবস্থান
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু অভিযোগ করে বলেন, “বিএনপিকে বিতর্কিত করতে একটি মহল ইন্ধন দিচ্ছে।” তিনি জামায়াতের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “তারা ব্যাংক, কোচিং সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয় দখল করেছে, অথচ এসব নিয়ে কথা হচ্ছে না।”
তারেক রহমানও বলেছেন, “বিএনপি অন্যায়ের পক্ষ নেয় না। কেউ অন্যায় করলে দল ব্যবস্থা নেয়। এটিই বিএনপির ও অন্যান্য দলের মধ্যে পার্থক্য।”
জনমত জরিপ ও চাঁদাবাজি ইস্যু
একটি সাম্প্রতিক জনমত জরিপে দেখা গেছে, ৯০% উত্তরদাতা মনে করেন দেশ বদলাতে হলে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও ঘুষ বন্ধ করতে হবে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে এনসিপি মাঠে নামবে।”
বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিতর্ক
বিএনপির অভ্যন্তরেও এ ইস্যুতে আলোচনা চলছে। ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার হক মজুমদার শিমুল বলেন, “দীর্ঘদিন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করা মানে চাঁদাবাজির বৈধতা পাওয়া নয়।”
কিছু বিএনপি নেতা বলছেন, আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ার পর অনেকে বাজার, ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব নিয়েছে, যা চাঁদাবাজি হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে।
জামায়াতের পরিকল্পনা ও বিএনপির আশঙ্কা
জামায়াত চাঁদাবাজি ইস্যুতে বিএনপিকে চাপে রাখার কৌশল নিচ্ছে। জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, “আমরা বিএনপির বিরুদ্ধে নই, চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে লড়াই করব।”
বিএনপি চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলগুলো এ ইস্যুতে তাদেরকে চাপে রাখতে চাইছে। চাঁদাবাজি এখন শুধুই অপরাধমূলক কার্যক্রম নয়, এটি নির্বাচনী কৌশলেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে।