
সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার সময় আরও বাড়ল
বাংলাদেশের সাংবাদিকতা জগতে আলোচিত এক হত্যাকাণ্ড হলো মাছরাঙা টিভির বার্তা সম্পাদক সাগর সরোয়ার ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক মেহেরুন রুনির নৃশংস হত্যা। ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তারা রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ছিল তাদের পাঁচ বছর বয়সী সন্তান মাহির সরোয়ার মেঘ। এই ঘটনায় বিচারপ্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং তদন্তে একাধিক সংস্থার ব্যর্থতা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের বিলম্ব ও আইনি জটিলতা
১. ১১৭ বার সময় বৃদ্ধি – তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের সময় ইতোমধ্যে ১১৭ বার পেছানো হয়েছে, যা বিচারিক ব্যবস্থার দুর্বলতাকে স্পষ্ট করে।
2. প্রতিবেদন দাখিলের সর্বশেষ তারিখ – আদালত সর্বশেষ ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন সময় নির্ধারণ করেছেন, যা আরও দীর্ঘসূত্রিতার ইঙ্গিত দেয়।
3. বিভিন্ন সংস্থার ব্যর্থতা – প্রথমে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মামলার তদন্ত করলেও পরে এটি র্যাবের হাতে যায়। এরপরও তদন্ত শেষ না হওয়ায় পিবিআই দায়িত্ব নেয়, কিন্তু তারাও সঠিক সময়ে প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হাইকোর্টের উদ্বেগ ও টাস্কফোর্স গঠন
হাইকোর্ট একাধিকবার তদন্ত সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।
- ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট র্যাবের ব্যর্থতা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
- পরবর্তীতে, আদালত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন টাস্কফোর্স গঠনের নির্দেশ দেন, যা ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।
রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
- সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ড সাংবাদিক মহলসহ পুরো জাতিকে নাড়া দিয়েছিল।
- দীর্ঘ ১২ বছরেও বিচার না পাওয়ায় ক্ষোভ রয়েছে, যা বিচারব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থার সংকট তৈরি করছে।
- তদন্তে ধীরগতির কারণে পরিবার ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে বিলম্ব হচ্ছে।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার বাংলাদেশের গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও ন্যায়বিচারের একটি পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। দীর্ঘসূত্রিতা ও তদন্ত সংস্থাগুলোর ব্যর্থতা বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতাকে ফুটিয়ে তুলছে। টাস্কফোর্সের মাধ্যমে কার্যকর তদন্ত ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা হলে বিচারিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে এবং পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।