July 7, 2025
সুধা সদনে আগুন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি

সুধা সদনে আগুন: আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি

ফেব্রু ৬, ২০২৫

ধানমন্ডি ৫-এর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদন অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের শিকার হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালেও ভবনের দোতলায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে, তবে ফায়ার সার্ভিস ‘নিরাপত্তার অভাব’ দেখিয়ে আগুন নেভানোর জন্য ঘটনাস্থলে যায়নি।

ঘটনার বিবরণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের পরপরই সুধা সদনে হামলা চালানো হয়। রাত সাড়ে ১১টার দিকে ফায়ার সার্ভিস আগুন লাগার সংবাদ পেলেও সেখানে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি ছিল না বলে জানিয়েছে। ফলে আগুন নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পড়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের ওপর।

ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র

বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে দেখা যায়—

  • দোতলায় আগুন জ্বলছে।
  • নিচতলা সম্পূর্ণ ভস্মীভূত, পোড়া গন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে আছে।
  • ফ্রিজ, খাট, ওয়ার্ডরোব, সোফাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভবনের সামনে পড়ে আছে।
  • বিভিন্ন তলার জানালার কাচ ভেঙে মাটিতে ছড়িয়ে পড়েছে।
  • অনেক বই পুড়ে গেছে, কিছু বই লুটপাট হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলার অনুপস্থিতি ও নিরাপত্তাহীনতা

এত বড় হামলা ও অগ্নিসংযোগের পরও কোনো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সেখানে উপস্থিত ছিল না। ধানমন্ডি সোসাইটির নিরাপত্তারক্ষীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে ১০–১২ জন যুবক ভবনটিতে আগুন লাগায়। পরে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় এবং আশপাশের লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

এই ঘটনার সূত্রপাত হয় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। ভারতে আশ্রয় নেওয়া শেখ হাসিনা বুধবার রাতে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের ফেসবুক পেজে ভাষণ দেন, যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তোলে।

বিকেলে বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে ধানমন্ডি ৩২ গুঁড়িয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়, যার মধ্যে অন্যতম ছিল—

  • ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির হুঁশিয়ারি।
  • বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহর পোস্ট: ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমিমুক্ত হবে।’

রাত ৮টার দিকে হাজারো বিক্ষোভকারী ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ফটক ভেঙে ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। এরপর রাত ১২টার দিকে এক্সকাভেটর ও ক্রেন দিয়ে ভবনটি ভাঙা শুরু হয়

সুধা সদনে আগুন, ধানমন্ডি ৩২-এর ধ্বংস, আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া—সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এক অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের গমন করতে না পারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতি রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে প্রকাশ করেছে। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চয়তার মুখে।

Leave a Reply