
শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৯ জনসহ ৪৭ জন খালাস
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক প্রক্রিয়ার গুরুত্বপূর্ণ এক অধ্যায় হলো পাবনার ঈশ্বরদীতে তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেনে হামলার মামলা। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার পর ২০২৪ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায়ে মামলার ৪৭ আসামিই খালাস পেয়েছেন, যা বিচারিক আদালতের আগের রায়ের সম্পূর্ণ বিপরীত।
রায়ের পটভূমি ও প্রেক্ষাপট
১৯৯৪ সালে সংঘটিত এই হামলায় অভিযোগ ছিল যে, বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনাকে বহনকারী ট্রেন লক্ষ্য করে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়েছিলেন। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ২০১৯ সালে পাবনার স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৩ আদালত ৯ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ২৫ জনকে যাবজ্জীবন ও ১৩ জনকে ১০ বছর করে কারাদণ্ড দেন।
হাইকোর্টের রায় ও তার তাৎপর্য
হাইকোর্টের বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব-উল ইসলাম ও বিচারপতি মো. হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই মামলার আসামিদের খালাসের রায় দিয়েছেন। রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের দীর্ঘ শুনানির পর হাইকোর্ট পূর্বের রায় বাতিল করেন।
এই রায় রাজনৈতিকভাবে এবং আইনি দৃষ্টিকোণ থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ:
- রাজনৈতিক প্রভাব: বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এই মামলা রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তবে হাইকোর্টের রায়ে খালাস পাওয়ার ফলে বিএনপি এ বিষয়ে নতুনভাবে কথা বলার সুযোগ পাবে।
- বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রশ্ন: নিম্ন আদালতের দেওয়া রায়কে হাইকোর্ট সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছে, যা বিচারিক ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা ও ন্যায়বিচার নিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিতে পারে।
- রাষ্ট্রপক্ষের অবস্থান: রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে কি না, তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
এই রায়ের ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনা শুরু হবে। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই এ রায় নিয়ে নিজেদের মতো ব্যাখ্যা দেবে।
এছাড়া, আইনি বিশেষজ্ঞদের মতে, হাইকোর্টের রায় বিচারিক প্রক্রিয়ার স্বাধীনতা ও মামলার উপস্থাপনার গুণগত মানের ওপর আলোকপাত করে। এ রায়ের ফলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মামলাগুলোর বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হতে পারে।
উপসংহার
হাইকোর্টের দেওয়া এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও বিচারিক ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির হয়ে থাকবে। এটি শুধু সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিদের জন্য নয়, সামগ্রিকভাবে দেশের বিচারিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার সূচনা করবে। এখন দেখার বিষয়, রাষ্ট্রপক্ষ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে কি না এবং পরবর্তী সময়ে এর কী প্রভাব পড়ে।