July 19, 2025
পাসপোর্ট ইস্যুতে বাদ যাচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন

পাসপোর্ট ইস্যুতে বাদ যাচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন

ফেব্রু ৪, ২০২৫

বাংলাদেশে পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া অবশেষে বাতিলের পথে। সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো নাগরিক হয়রানি কমাতে এবং প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে এই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। সম্প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের এক সভায় এই প্রস্তাব আলোচিত হয়, যা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এখন নীতিনির্ধারকদের মধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

মূল কারণ ও সমস্যা চিহ্নিতকরণ

১. পুলিশ ভেরিফিকেশনের বিলম্ব ও হয়রানি

  • বর্তমানে ১৬ হাজার পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়ন কেবল পুলিশ ভেরিফিকেশনের কারণে আটকে আছে।
  • দ্রুত বিদেশ যাত্রার প্রয়োজন হলে নাগরিকদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হয়, যা চিকিৎসা বা জরুরি প্রয়োজনে সমস্যা তৈরি করছে।
  • ইংল্যান্ডের মতো দেশে পোস্ট অফিস থেকে সরাসরি পাসপোর্ট বিতরণ করা হয়, সেখানে বাংলাদেশে পুলিশের মাধ্যমে যাচাইয়ের কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিলম্ব হয়।
  1. দুর্নীতি ও ঘুষের সংস্কৃতি
    • ভেরিফিকেশনের নামে নাগরিকদের কাছ থেকে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
    • আইনত এর কোনো ভিত্তি নেই, তবে এটি একপ্রকার অলিখিত নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে।
    • রাজনৈতিক পরিচিতি যাচাইয়ের নামে বৈষম্য সৃষ্টি হয়, যা নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী।
  2. ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন
    • জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধন এখন ডিজিটাল ডাটাবেজে সংরক্ষিত, যা পরিচয় যাচাইয়ের জন্য যথেষ্ট।
    • পুলিশি যাচাইপদ্ধতি অপ্রয়োজনীয় জটিলতা সৃষ্টি করছে এবং একে এক ধরনের আমলাতান্ত্রিক বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
    • জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন উভয়েই এই প্রক্রিয়া বাতিলের সুপারিশ করেছে।

সরকারের সম্ভাব্য পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা

  • পুলিশ ভেরিফিকেশন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করা হতে পারে এবং এর পরিবর্তে জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে পাসপোর্ট প্রদান করা হবে।
  • চাকরির ক্ষেত্রেও রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা যাচাই বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে, যা সরকারি চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পারে।
  • স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসারে নতুন নীতিমালা তৈরি করা হবে, যা পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি) ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করবে।

সম্ভাব্য প্রভাব ও চ্যালেঞ্জ

ইতিবাচক দিক:

  • নাগরিকরা সহজে ও দ্রুত পাসপোর্ট পাবে, প্রশাসনিক ব্যয় কমবে।
  • ঘুষ ও হয়রানি বন্ধ হবে, বিশেষ করে নিম্নবিত্ত ও প্রবাসী কর্মীদের জন্য সুবিধা বৃদ্ধি পাবে।
  • রাজনৈতিক বৈষম্য কমবে এবং নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী বাধা দূর হবে।

সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ:

  • নিরাপত্তা ঝুঁকি: কোনো ব্যক্তি যদি ভুয়া পরিচয়পত্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে, তবে জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
  • কারিগরি জটিলতা: জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডার যথেষ্ট নির্ভুল কিনা তা নিশ্চিত করা জরুরি।

বাংলাদেশে পাসপোর্ট ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া বাতিল করা যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত হতে পারে। এটি একদিকে নাগরিক হয়রানি কমাবে, অন্যদিকে প্রশাসনিক দক্ষতা বাড়াবে। তবে জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে একটি কার্যকর যাচাইব্যবস্থা নিশ্চিত করা প্রয়োজন, যাতে পরিচয় সংক্রান্ত জালিয়াতি বন্ধ হয়।

Leave a Reply