April 30, 2025
বাণিজ্য-বিনিয়োগে নতুন দ্বার খুলতে পারে বাংলাদেশের

বাণিজ্য-বিনিয়োগে নতুন দ্বার খুলতে পারে বাংলাদেশের

ফেব্রু ৩, ২০২৫

বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক নিয়ে লড়াই বিশ্ববাণিজ্যে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তবে এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সম্ভাবনাময় পরিস্থিতি তৈরি করেছে। তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন রপ্তানি খাতে বাংলাদেশের জন্য নতুন চাহিদার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। তুলনামূলক কম শুল্ক সুবিধার কারণে বাংলাদেশি পণ্য পশ্চিমা ভোক্তাদের জন্য আরও সাশ্রয়ী হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কানাডা, মেক্সিকোসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়াতে পারে। তবে সঠিক কৌশল গ্রহণ করতে না পারলে এই সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

বিশ্ববাণিজ্যে শুল্ক লড়াইয়ের প্রভাব

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার মধ্যে শুরু হওয়া শুল্ক লড়াই অন্য দেশগুলোতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। কানাডা মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসানোর ঘোষণা দিয়েছে, যা মেক্সিকো ও চীনের মতো দেশগুলোকেও একই ধরনের পাল্টা পদক্ষেপ নিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে। এর ফলে বিশ্ববাণিজ্যে অস্থিরতা তৈরি হবে, যদিও মৌলিক প্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমার সম্ভাবনা কম।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, বড় অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে শুল্ক লড়াইয়ের ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি ও এফডিআই বৃদ্ধি পাবে। তবে বৈশ্বিক অর্থনীতি দুর্বল হলে ইউরোপীয় বাজারে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে পারে, তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে অভিবাসন ব্যাহত হতে পারে এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ হ্রাস পেতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত এই শুল্ক লড়াইয়ের সুবিধা নিতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে, যার ২০-২২ শতাংশই যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে আসে। অন্যদিকে, চীন যুক্তরাষ্ট্রে ২১ শতাংশ তৈরি পোশাক রপ্তানি করে, যেখানে বাংলাদেশের হিস্যা মাত্র ৯ শতাংশের কিছু বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি সংস্থা ওটেক্সার প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে তৃতীয় স্থানে রয়েছে, যেখানে ভিয়েতনাম দ্বিতীয় এবং মেক্সিকো ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে।

বিজিএমইএ-এর সহায়ক কমিটির সদস্য আসিফ আশরাফ মনে করেন, শুল্ক লড়াইয়ের কারণে ক্রেতারা বিকল্প দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দিকে নজর দিতে পারে। তবে বাংলাদেশের নীতিগত অস্থিরতা, যেমন গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যয় বাড়িয়ে দিতে পারে, যা প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করবে। এর ফলে বাংলাদেশ সুবিধা হারিয়ে ভিয়েতনাম বা ভারতের মতো প্রতিযোগীদের কাছে বাজার হারাতে পারে।

বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ

বিটিএমএ পরিচালক খোরশেদ আলম মনে করেন, কম শুল্ক সুবিধার কারণে বাংলাদেশি পণ্য পশ্চিমা বাজারে আরও প্রতিযোগিতামূলক হবে। একই সঙ্গে, চীন ও মেক্সিকোর বিনিয়োগকারীরা যুক্তরাষ্ট্রে কম শুল্ক সুবিধা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়াতে পারেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যে গড়ে ১৫.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ রয়েছে, যা তুলনামূলকভাবে কম।

২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট পোশাক রপ্তানির প্রায় ১৯ শতাংশ। একসময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি ৯৭ শতাংশ পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পেত, যদিও পোশাক এই সুবিধার অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা স্থগিত করে। তবে কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশ বর্তমানে তৈরি পোশাক শিল্পে একটি রোল মডেল হয়ে উঠেছে। এই উন্নয়নের ফলে চীনের বিনিয়োগকারীদের জন্য বাংলাদেশ আরও আকর্ষণীয় গন্তব্য হতে পারে।

বিশ্ববাণিজ্যে শুল্ক লড়াই বাংলাদেশের জন্য বড় সম্ভাবনা তৈরি করেছে। তবে এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে দেশকে কার্যকর নীতিগত পদক্ষেপ নিতে হবে। বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি, উৎপাদন ব্যয় নিয়ন্ত্রণ, এবং শিল্প এলাকার উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পারলে বাংলাদেশ এই সুযোগকে দীর্ঘমেয়াদে কাজে লাগাতে সক্ষম হবে।

Leave a Reply