July 19, 2025
শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কানাডা

শুল্ক আরোপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে কানাডা

ফেব্রু ৩, ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি সবসময়ই প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক এবং প্রোটেকশনিস্ট (সংরক্ষণবাদী) ছিল। তার সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত বিশেষ করে কানাডার অর্থনীতির ওপর বড় প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে কানাডা আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে এবং পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ ও তার প্রভাব

ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার প্রায় সব পণ্যের ওপর ২৫% আমদানি শুল্ক আরোপ করেছে, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। জ্বালানি খাতে ১০% শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে, যা ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে। যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতি কানাডার অর্থনীতির জন্য বিশেষভাবে ক্ষতিকর হতে পারে, কারণ কানাডার প্রধান রপ্তানি গন্তব্য হলো যুক্তরাষ্ট্র।

এই শুল্কের পেছনে ট্রাম্প প্রশাসনের দুটি মূল যুক্তি রয়েছে:

  1. অর্থনৈতিক সুরক্ষা – ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা করতে চান এবং বিদেশি প্রতিযোগিতা কমাতে চান।
  2. রাজনৈতিক উদ্দেশ্য – ট্রাম্পের দাবি, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে অবৈধ অভিবাসী এবং মাদক প্রবাহ ঠেকাতে এই শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

তবে বাস্তবতা হলো, এই শুল্ক আরোপ বিশ্ব বাণিজ্যের নিয়ম লঙ্ঘন করতে পারে এবং এটি মুক্তবাজার অর্থনীতির নীতির বিপরীত।

কানাডার প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা ব্যবস্থা

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের জবাবে কানাডা ১,২৫৬টি মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টা ২৫% শুল্ক আরোপ করেছে, যা মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে। এই শুল্কের আওতায় রয়েছে—

  • কমলার জুস
  • পিনাট বাটার
  • ওয়াইন
  • বিয়ার
  • মোটরসাইকেল
  • প্রসাধনী

কানাডার এই পদক্ষেপ মূলত দুটি উদ্দেশ্য সাধন করবে:

  1. যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করা, যাতে তারা শুল্ক নীতি পুনর্বিবেচনা করে।
  2. কানাডার অভ্যন্তরীণ উৎপাদকদের সুরক্ষা দেওয়া, যাতে তারা ক্ষতির সম্মুখীন না হয়।

কানাডা আরও ঘোষণা করেছে যে, তারা যাত্রীবাহী যান, ট্রাক, বৈদ্যুতিক যান এবং মহাকাশ-সম্পর্কিত পণ্যেও শুল্ক আরোপ করবে। এতে মার্কিন কোম্পানিগুলোর বড় আর্থিক ক্ষতি হতে পারে।

বাণিজ্যযুদ্ধের সম্ভাব্য প্রভাব

এই বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে উভয় দেশের অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

১. মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি

শুল্কের ফলে পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে, যা সাধারণ ভোক্তাদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করবে।

২. ব্যবসায়িক অস্থিরতা

দুই দেশের মধ্যে রপ্তানি-আমদানির ওপর নির্ভরশীল ব্যবসাগুলো বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে।

৩. চাকরির বাজারে প্রভাব

বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে কোম্পানিগুলো উৎপাদন কমাতে বাধ্য হতে পারে, যা কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

৪. বৈশ্বিক অর্থনীতির ক্ষতি

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইনে সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতিকে দুর্বল করে দিতে পারে।

আইনি ব্যবস্থা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা

কানাডা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (WTO) ও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (USMCA) আওতায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। যদি আন্তর্জাতিক আদালতে এই বিষয়টি গড়ায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রায় আসতে পারে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন অতীতে WTO-এর রায় মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে, যা এই আইনি লড়াইকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার বাণিজ্যযুদ্ধ উত্তর আমেরিকার অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি সৃষ্টি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক নীতি কেবল কানাডার জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তা ও ব্যবসার জন্যও নেতিবাচক হতে পারে। পাল্টা শুল্ক আরোপের ফলে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধান সবচেয়ে যৌক্তিক পথ হতে পারে। অন্যথায়, এই বাণিজ্যযুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে উভয় দেশের অর্থনীতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

Leave a Reply