July 16, 2025
ভোটের রাজনীতি ধনীদের হাতে

ভোটের রাজনীতি ধনীদের হাতে

ফেব্রু ৩, ২০২৫

ডব্লিউএফডির প্রতিবেদনে উঠে আসা তথ্যগুলো বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তিমূলকতার প্রতি এক গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনে সাফ বলা হয়েছে যে, নির্বাচনে টাকার খেলা অত্যন্ত প্রবল হয়ে উঠছে, যা ভোটের আগে থেকেই শুরু হয়ে যায় এবং ফলাফল ঘোষণার পর পর্যন্ত চলে। এই পরিস্থিতি নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ধনী গোষ্ঠী এবং ব্যবসায়ীদের হাতে তুলে দিচ্ছে, যা সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে তরুণ, নারী এবং প্রান্তিক জনগণের অংশগ্রহণের সুযোগ কমিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে, গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা পূরণের চেয়ে নির্বাচনী প্রক্রিয়া হয়ে উঠছে ধনীদের জন্য একটি মঞ্চ, যা দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করতে পারে।

বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় যে খরচের হার পাল্লা দিয়ে বেড়েছে, তা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ সাধারণ মানুষের জন্য ক্রমেই সংকুচিত করে দিচ্ছে। নির্বাচনী প্রচারণায় বিশাল অঙ্কের অর্থ খরচ করা, বিশেষ করে রাজনৈতিক দলের ফান্ডের মাধ্যমে প্রার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা নেওয়ার রেওয়াজ, বাংলাদেশের রাজনীতিকে ধনী গোষ্ঠীর জন্য আরও সুবিধাজনক করে তুলছে। এই পরিস্থিতি প্রান্তিক পর্যায়ের প্রার্থীদের, বিশেষ করে নারী এবং তরুণদের, জন্য একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অর্থ এবং রিসোর্সের অভাব এক বিশাল চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।

প্রতিবেদনে যে তথ্যগুলো উঠে এসেছে, যেমন ২০১৮ সালে সুশাসনের জন্য নাগরিকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সংসদ সদস্যদের প্রায় ৮২ শতাংশের সম্পদ এক কোটি টাকার বেশি, এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মধ্যে ৯২.৮ শতাংশের বার্ষিক আয় দুই কোটি টাকার বেশি, তা নির্বাচনে ধনী-গরিবের বৈষম্য স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তোলে। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী, একজন প্রার্থী সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনের জন্য ব্যয় করতে পারবেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, ২০০-এরও বেশি প্রার্থী প্রচারণায় সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করেছেন। এর মাধ্যমে নির্বাচনী খরচের যে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, তা অনেক যোগ্য এবং সৎ প্রার্থীর জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ কঠিন করে তুলছে।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, প্রতিবেদনে “অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন” বলতে শুধু রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের কথাই নয়, সাধারণ মানুষেরও অংশগ্রহণের বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। অর্থাৎ, নির্বাচনে অংশগ্রহণের খরচ যদি এত বেশি হয়, তবে সাধারণ মানুষ, যারা রাজনৈতিকভাবে সক্রিয় হতে চান, তাদের জন্য এতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব হয় না। এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য একটি বড় সমস্যা, যেখানে নির্বাচন হতে গিয়ে শুধুমাত্র ধনীদেরই জয়লাভের সুযোগ তৈরি হচ্ছে, ফলে গণতন্ত্রের প্রকৃত মানে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

অতএব, নির্বাচনে টাকার প্রভাব কমানোর এবং আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার কার্যক্রম এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Leave a Reply