
এবার সার্বিয়ায় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, চাপে প্রেসিডেন্ট
সার্বিয়ায় শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে চলমান দুর্নীতিবিরোধী বিক্ষোভ দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতাকে নতুন মাত্রায় নিয়ে গেছে। নোভি সাদ শহরের রেলস্টেশনের ছাদ ধসে ১৫ জন নিহত হওয়ার পর থেকেই এই বিক্ষোভ শুরু হয়, যা ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী আন্দোলনে রূপ নেয়। সরকারের দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে ক্ষোভ থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামে এবং তাদের দাবির মুখে ইতোমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার পদ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন।
বিক্ষোভের কারণ ও ক্রমবিকাশ
মূলত, তিন মাস আগে নোভি সাদের রেলস্টেশনের ছাদ ধসের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভের সূচনা হলেও, এটি এখন সামগ্রিকভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, এ দুর্ঘটনার জন্য সরকারি দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দায়ী। সরকারের দুর্নীতির কারণে নিরাপত্তা মান বজায় না রেখে অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়, যা ভয়াবহ প্রাণহানির কারণ হয়েছে।
বিক্ষোভের মাত্রা ও ব্যাপকতা বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যতম কারণ হলো সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ও জবাবদিহির অভাব। শিক্ষার্থীরা শুরুতে শুধুমাত্র দোষীদের শাস্তির দাবি করলেও, সরকারের প্রতিক্রিয়া এবং দুর্নীতির গভীরতা দেখে আন্দোলনটি আরও ব্যাপক হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে এটি সার্বিয়ার রাজনৈতিক দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং গণতন্ত্র সংকটের বিরুদ্ধে এক বৃহৎ প্রতিবাদে পরিণত হয়।
বিক্ষোভের প্রভাব ও সরকারে চাপ
শিক্ষার্থীদের লাগাতার বিক্ষোভের ফলে সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী মিলোস ভুচেভিচসহ একাধিক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন, যা সরকারের ওপর বিক্ষোভের সরাসরি প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। সাধারণত ইউরোপের দেশগুলোতে শিক্ষার্থীরা সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে, আর সার্বিয়ার ক্ষেত্রেও এটি প্রমাণিত হয়েছে।
বিক্ষোভের সময় রাজধানী বেলগ্রেডসহ বিভিন্ন শহরে স্কুল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, যা স্পষ্টতই অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কৃষকরাও ট্রাক্টর নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় আন্দোলনটি শহরকেন্দ্রিক না থেকে গ্রামীণ জনগণেরও সমর্থন লাভ করেছে। এটি দেখায় যে, শুধুমাত্র শিক্ষার্থীরাই নয়, সাধারণ জনগণের মধ্যেও সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে।
সরকারের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সরকার শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি নমনীয় না হয়ে বরং অভিযোগ তুলছে যে, এ বিক্ষোভের পেছনে বিদেশি শক্তির ইন্ধন রয়েছে। এটি একটি প্রচলিত রাজনৈতিক কৌশল, যেখানে অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাকে আড়াল করতে বাইরের শক্তির ওপর দায় চাপানো হয়। তবে শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করেছে যে, তাদের আন্দোলন স্বতঃস্ফূর্ত এবং এটি শুধুমাত্র সরকারের জবাবদিহিতার জন্যই পরিচালিত হচ্ছে।
এই বিক্ষোভের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা নির্ভর করছে সরকারের প্রতিক্রিয়ার ওপর। যদি সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়, তবে আন্দোলনের চাপ কিছুটা কমতে পারে। তবে যদি সরকার কেবল রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করে এবং শিক্ষার্থীদের দমন করার চেষ্টা করে, তাহলে এটি আরও সহিংস কিংবা দীর্ঘস্থায়ী রূপ নিতে পারে।
সার্বিয়ার শিক্ষার্থীদের এ দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন শুধু দেশটির রাজনীতির জন্য নয়, বরং গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে পারে। এটি দেখিয়েছে যে, জনগণ বিশেষ করে তরুণরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নামতে প্রস্তুত। সরকারের উচিত হবে জনগণের দাবির প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেওয়া এবং স্বচ্ছতার মাধ্যমে প্রশাসনিক সংস্কার করা। অন্যথায়, এই আন্দোলন আরও বৃহৎ আকার ধারণ করতে পারে এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।