July 8, 2025
যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি: ট্রাম্পের নতুন নীতিতে বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন

যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি: ট্রাম্পের নতুন নীতিতে বাণিজ্য সম্পর্কের টানাপোড়েন

ফেব্রু ২, ২০২৫

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কানাডা, মেক্সিকো ও চীনের পণ্য আমদানিতে নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন। কানাডা ও মেক্সিকোর পণ্যে ২৫% এবং চীনের পণ্যে বিদ্যমান হারের চেয়ে ১০% বেশি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। এই নতুন নীতি মঙ্গলবার থেকে কার্যকর হবে।

বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এই শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটাতে পারে, মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে এবং শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে

ট্রাম্প প্রশাসনের যুক্তি

হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হ্যারিসন ফিল্ডস সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ দেওয়া পোস্টে দাবি করেন,

“এই সাহসী পদক্ষেপ অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করবে এবং বিপজ্জনক মাদকের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে আনবে।”

ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত শুধুমাত্র প্রথম ধাপ। ভবিষ্যতে ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ওষুধ, তেল ও গ্যাস, সেমিকন্ডাক্টর চিপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানির ওপরও নতুন শুল্ক আরোপ করা হতে পারে

কানাডা ও মেক্সিকোর প্রতিক্রিয়া

নতুন শুল্ক নীতির বিরুদ্ধে কানাডা ও মেক্সিকো দ্রুত পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো শনিবার রাতে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
  • অন্টারিওর প্রিমিয়ার ডগ ফোর্ড হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন,

“আমাদের প্রতিক্রিয়ামূলক শুল্ক কেবল শুরু। কানাডার এমন অনেক কিছু রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ও অর্থনীতির জন্য অপরিহার্য— হাইগ্রেড নিকেল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদ।”

সম্ভাব্য প্রভাব ও শঙ্কা

১. মূল্যস্ফীতি ও ব্যয় বৃদ্ধি

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে ব্যবসাগুলো তাদের বাড়তি ব্যয় ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবে, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। ননপার্টিজান থিংক ট্যাঙ্ক ট্যাক্স ফাউন্ডেশন অনুমান করছে,

“এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি গৃহস্থালির বার্ষিক গড় করবৃদ্ধি ৮৩০ ডলার পর্যন্ত হতে পারে।”

২. কৃষি খাতে ধাক্কা

২০১৮ সালে ট্রাম্প যখন চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু করেছিলেন, তখন চীন পাল্টা শুল্ক বসিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল। বিশেষজ্ঞ বিল রেইনশ বলছেন,

“কৃষি খাত সাধারণত প্রথম আঘাত পায়, কারণ সহজেই বিকল্প উৎস পাওয়া যায়।”

৩. অটোমোবাইল শিল্পের সংকট

যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর গাড়ি উৎপাদন ব্যবস্থা একীভূত রয়েছে। নতুন শুল্কের কারণে গাড়ির যন্ত্রাংশ একাধিকবার সীমান্ত পার হওয়ার সময় কর আরোপ হলে ব্যয় দ্রুত বেড়ে যাবে

রেইনশ সতর্ক করে বলেছেন,

“অটোমোবাইল শিল্প সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ এটি তিন দেশের ওপর নির্ভরশীল।”

ট্রাম্পের প্রতিক্রিয়া

ট্রাম্প স্বীকার করেছেন, তার শুল্ক নীতির ফলে “স্বল্পমেয়াদি কিছু সমস্যা” সৃষ্টি হতে পারে, তবে তিনি দাবি করেছেন যে এই সিদ্ধান্ত দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে এবং দেশীয় উৎপাদন ফিরিয়ে আনবে

ট্রাম্পের নতুন শুল্ক নীতি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে উত্তেজনা বাড়াবে, শিল্প ও কৃষি খাতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং সাধারণ ভোক্তাদের ব্যয় বাড়াবে। তবে ট্রাম্পের মতে, এটি যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শিল্পকে রক্ষা করবে এবং অর্থনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে লাভবান করবে

বাণিজ্য নীতির এই পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতির জন্য কী প্রভাব ফেলবে, তা এখন সময়ই বলে দেবে।

Leave a Reply