July 7, 2025
ভারতের সঙ্গে নরম সুরে কথা বলবে না বাংলাদেশ

ভারতের সঙ্গে নরম সুরে কথা বলবে না বাংলাদেশ

জানু ৩০, ২০২৫

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত পরিস্থিতি এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে আসন্ন বিজিবি-বিএসএফ সীমান্ত সম্মেলন বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্য অনুসারে, এবার বাংলাদেশ নরম কূটনৈতিক অবস্থান থেকে সরে এসে ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন অসম চুক্তি ও সীমান্ত ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান নিতে চায়।

১. অসম চুক্তি ও কূটনৈতিক চাপ

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভারতের সঙ্গে একাধিক চুক্তি হয়েছে, যা বিভিন্ন মহলে অসম চুক্তি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বিশেষ করে ২০১০ সালের সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর মন্তব্য ইঙ্গিত দেয় যে, এটি বাংলাদেশের স্বার্থের পক্ষে পুরোপুরি সহায়ক ছিল না। এবার এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে আলোচনায় চাপ সৃষ্টি করার পরিকল্পনা রয়েছে।

২. সীমান্ত হত্যা ও নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা

সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার বিষয়টি বহুদিন ধরে আলোচিত এবং এটি অন্যতম বড় মানবাধিকার ইস্যু। বাংলাদেশ এবার সীমান্ত হত্যার স্থায়ী সমাধান চায় এবং ভারতকে এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কঠোরভাবে বলবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে। বিশেষ করে, সীমান্তবর্তী কৃষকদের হয়রানি এবং ধরে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।

৩. পানি বণ্টন ও যৌথ নদী ব্যবস্থাপনা

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্ক রয়েছে। তিস্তা চুক্তি এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, এবং অন্যান্য অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টন নিয়েও সমস্যার সম্মুখীন বাংলাদেশ। এবারের সম্মেলনে যৌথ নদী কমিশনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন, যা ইঙ্গিত দেয় যে পানি বণ্টন সংক্রান্ত বিষয়েও বাংলাদেশ কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করতে চায়।

৪. অবৈধ অনুপ্রবেশ ও মাদক চোরাচালান

সীমান্ত এলাকায় অবৈধ অনুপ্রবেশ, চোরাচালান এবং মাদক কারবারের মতো অপরাধ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ এসব অপরাধ ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নিতে চায় এবং বিএসএফের সঙ্গে যৌথ সমাধানের বিষয়ে আলোচনা করবে।

৫. ভারতীয় গণমাধ্যমের ভুল তথ্য ও প্রচার

বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে অপপ্রচার ও ভুল তথ্যের প্রবাহ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। এ ধরনের প্রচার দুই দেশের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় উত্তেজনা বাড়ায়, তাই এটি দমনের উপায় খুঁজতে আলোচনা করা হবে।

৬. অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা

বাংলাদেশে অবৈধভাবে অবস্থান করা বিদেশিদের বিরুদ্ধে ৩১ জানুয়ারির পর কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। ভিসার সময়সীমা পেরিয়ে গেলে প্রতিদিন ১,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে, যা আগে ২০০ টাকা ছিল। ৩১ জানুয়ারির মধ্যে স্বেচ্ছায় চলে গেলে সমস্যা হবে না, কিন্তু এরপর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সীমান্ত সম্মেলন ঘিরে বাংলাদেশের এবারের কূটনৈতিক অবস্থান আগের তুলনায় বেশি কঠোর মনে হচ্ছে। অসম চুক্তি, সীমান্ত হত্যা, পানি বণ্টন, চোরাচালান ও অপপ্রচার রোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে। তবে ভারতের প্রতিক্রিয়া এবং সম্মেলনের ফলাফল বাংলাদেশ কতটা কূটনৈতিক সুবিধা আদায় করতে পারবে, সেটি নির্ভর করবে আলোচনার গতিপথের ওপর।

Leave a Reply