July 8, 2025
এবার ইসি নিজেই আইন পর্যালোচনা করছে

এবার ইসি নিজেই আইন পর্যালোচনা করছে

জানু ৩০, ২০২৫

বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের মধ্যে এক ধরনের সমন্বয়হীনতা তৈরি হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ইসি নিজস্বভাবে ভোটার তালিকা আইন, সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা এবং গণমাধ্যমের জন্য নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ সংক্রান্ত নীতিমালা পর্যালোচনা করছে। অথচ একই বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন।

ইসির নিজস্ব পর্যালোচনার উদ্যোগ

নির্বাচন কমিশন বলছে, তারা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ওপর নির্ভর না করে নিজস্ব প্রয়োজন অনুযায়ী আইন-বিধি পর্যালোচনা করছে। সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দীন পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ইসির স্বাধীনতা রক্ষার স্বার্থে কিছু সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে, যা সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সাথে নাও মিলতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার ইসি চারটি গুরুত্বপূর্ণ আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে বসছে। আলোচনার বিষয়গুলো হলো—

  1. ভোটার তালিকা আইন
  2. সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন
  3. নির্বাচন পর্যবেক্ষক নীতিমালা
  4. গণমাধ্যমের জন্য নির্বাচনী সংবাদ সংগ্রহ নীতিমালা

সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও বিতর্ক

সংস্কার কমিশন ইতিমধ্যে ১৬টি বিষয়ের ওপর ১৫০টি সুপারিশের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে—

  • সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি স্বাধীন কর্তৃপক্ষ গঠন
  • আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যম নীতিমালা প্রণয়ন
  • জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন ব্যবস্থার সংস্কার

সংস্কার কমিশনের সদস্যদের একাংশ মনে করেন, ইসির নিজস্ব উদ্যোগ একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি করতে পারে। কারণ, সংস্কার কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশের আগেই ইসি যদি আলাদাভাবে সুপারিশ চূড়ান্ত করে, তাহলে দুটি প্রতিষ্ঠানের সুপারিশের মধ্যে সমন্বয় সংকট দেখা দিতে পারে।

ইসি বনাম সংস্কার কমিশন: সাংঘর্ষিকতা নাকি প্রস্তুতি?

ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, আইন সংশোধন নয়, বরং পর্যালোচনার কাজ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশের সাথে সাংঘর্ষিক হওয়ার কোনো কারণ নেই এবং ইসি মূলত নিজেদের প্রস্তুতি এগিয়ে রাখছে। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, একই বিষয়ে দুই পক্ষের আলাদা সুপারিশ এক ধরনের প্রশাসনিক জটিলতা তৈরি করতে পারে।

নির্বাচনের প্রস্তুতি ও ভবিষ্যৎ করণীয়

সরকার এখনো আগামী জাতীয় নির্বাচনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে ইসি ডিসেম্বর ২০২৫-এ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাব্য সময় ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

যদি ওই সময় নির্বাচন হয়, তবে ইসিকে অক্টোবরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে হবে। এতে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইন ও ভোটার তালিকা সংশোধনের মতো কাজ জরুরি হয়ে উঠবে।

নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি সুসমন্বিত কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। সংস্কার কমিশন ও ইসির পৃথক সুপারিশের কারণে সাংঘর্ষিক অবস্থান তৈরি হলে তা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অস্থিরতা বাড়াতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হলে দুই সংস্থার মধ্যে কার্যকর সমন্বয় জরুরি। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিভাবে এই বিষয়গুলোকে সামঞ্জস্যপূর্ণ করে এগিয়ে নেয়।

Leave a Reply