July 19, 2025
‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নিজস্ব প্রস্তাব দেবে বিএনপি

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে নিজস্ব প্রস্তাব দেবে বিএনপি

জানু ২৯, ২০২৫

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) শিগগিরই ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র’ নিয়ে দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করবে। এ লক্ষ্যে দলটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং আজ (বুধবার) সন্ধ্যায় দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে আলোচনার ভিত্তিতে ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত রূপরেখা নির্ধারণ করা হবে।

দলীয় পর্যায়ে আলোচনা ও সমন্বয়

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এই ঘোষণাপত্র প্রণয়নের দায়িত্ব পেয়েছেন। সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হচ্ছে এবং ছাত্রদের দেওয়া ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়েও আলোচনা চলছে। বিএনপি ঘোষণাপত্রটি পুরোপুরি বাতিল করতে চায় না, বরং কীভাবে এটিকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে দলীয়ভাবে কাজ করছে।

তবে, বাহাত্তরের সংবিধানের মূলনীতি বাতিলের বিষয়টি যুক্তিযুক্ত নয় বলে মনে করে বিএনপি। দলটির মতে, মুক্তিযুদ্ধই বাংলাদেশের ভিত্তি এবং এর ইতিহাস বিকৃতি বা আড়াল করা যাবে না। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখেই ঘোষণাপত্র চূড়ান্ত করা হবে।

রাজনৈতিক শরিকদের সঙ্গে আলোচনা

বিএনপি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ আমলে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দলগুলোর সঙ্গেও আলোচনার মাধ্যমে ঘোষণাপত্রটি তৈরি করা হবে। দলটি চায়, সরকারবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে শরিক দলগুলোর মতামত অন্তর্ভুক্ত করা হোক, যেমনটা আগের ৩১ দফা ঘোষণার ক্ষেত্রেও করা হয়েছিল।

জাতীয় নাগরিক কমিটি ও ছাত্র প্রতিনিধিদের খসড়া ঘোষণাপত্রে ৫ আগস্ট থেকে কার্যকারিতার কথা বলা হয়েছে, যা নিয়ে বিএনপির আপত্তি রয়েছে। দলটির মতে, এটি ‘ডিক্লারেশন’ হিসেবে থাকতে হবে এবং যখন রাজনৈতিক ঐকমত্য হবে, তখন এটি ঘোষিত বলে গণ্য হবে।

বিএনপির অবস্থান ও দাবিগুলো

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেছেন, বিএনপি ইতিহাস বিকৃতি চায় না এবং কাউকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছোট বা বড় করার রাজনীতি করবে না। বরং, বিগত আমলের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের ইতিহাস যাতে যথাযথভাবে লিপিবদ্ধ হয়, সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।

অন্য এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, ৩৬ দিনের আন্দোলনেই শেখ হাসিনার পতন হয়নি। বরং, বিগত বছরগুলোর গণতান্ত্রিক আন্দোলন, ত্যাগ-নির্যাতন ও বিএনপির সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মীর শহীদ হওয়ার ঘটনাগুলোও ঘোষণাপত্রে থাকা উচিত।

যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের মতামত

  • বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে গুম-খুন, নির্যাতনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করে একটি বয়ান উপস্থাপন করা প্রয়োজন।
  • গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেন, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন কেবল ৩৬ দিনের আন্দোলনের ফসল নয়। বিগত বছরগুলোর লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসও ঘোষণাপত্রে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হওয়া দরকার।

বিএনপি চায় ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ দলীয় ঐক্য, আন্দোলনের শরিকদের মতামত এবং রাজনৈতিক বাস্তবতাকে বিবেচনায় রেখে চূড়ান্ত করতে। দলটি মনে করে, বিগত আন্দোলনের সব অংশীদারের ভূমিকার স্বীকৃতি থাকা উচিত এবং এটি একটি ঐক্যমতের ভিত্তিতে গৃহীত ঘোষণা হওয়া প্রয়োজন। আজকের স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে বিএনপি এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে।

Leave a Reply