July 16, 2025
‘আমার বাড়িটা আর নেই’: উত্তর গাজায় ফিরে যা দেখছেন ফিলিস্তিনিরা

‘আমার বাড়িটা আর নেই’: উত্তর গাজায় ফিরে যা দেখছেন ফিলিস্তিনিরা

জানু ২৮, ২০২৫

গাজার উত্তরাঞ্চলের একসময়কার নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা এলাকায় ফেরার পর ৪৪ বছর বয়সী সাবরাইন জানুনের অনুভূতি ছিল মিশ্র। তিনি বলছিলেন, “আমরা স্বজনদের সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত হলেও ধ্বংসস্তূপে পরিণত বাড়িঘর দেখে কান্না আটকে রাখতে পারিনি।” সাবরাইনের মতোই যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে বহু ফিলিস্তিনি নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন, কিন্তু সেখানে তারা পাচ্ছেন কেবল ধ্বংসস্তূপ।

যুদ্ধবিরতি এবং ঘরে ফেরার গল্প

সম্প্রতি ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠার পর গাজার উত্তরাঞ্চলে ফিরতে শুরু করেছেন লাখো ফিলিস্তিনি। গাজার একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন, মাত্র দুই ঘণ্টায় দুই লাখের বেশি মানুষ উপকূলীয় সড়ক ‘আল-রশিদ স্ট্রিট’ ধরে উত্তরাঞ্চলে ফিরেছেন।

২৪ বছর বয়সী ইসরা শাহিন নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে বলছিলেন, “যাত্রার প্রথমদিকে লোকজন আনন্দ করছিল, গান গাইছিল। কিন্তু যত সময় গড়াচ্ছিল, হতাশা বাড়ছিল।” গাজার প্রবেশপথে পৌঁছানোর পর ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে লোকজন আনন্দে ফেটে পড়লেও নিজের বাড়ি মাটির সঙ্গে মিশে থাকতে দেখে তাদের আনন্দ ম্লান হয়ে যায়।

ধ্বংসস্তূপের মাঝে জীবনযাত্রা

গাজা সিটিতে ফিরেও অনেকে বাড়ির বদলে তাঁবুতেই উঠছেন। ৪২ বছর বয়সী ওয়াফা হাসুনা বলেন, “উত্তর গাজার সড়কজুড়ে শুধু ফিরতি মানুষের ভিড়। কিন্তু আমার বাড়ি আর নেই, শুধু ধ্বংসস্তূপ।” সাবরাইন জানুনের মতো আরও অনেকেই বলছেন, একসময় যে এলাকায় মানুষ প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে আসত, এখন সেটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।

লুবানা নাসের নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, “স্বামীর সঙ্গে পুনর্মিলন হলেও বাস্তবতা কঠিন। বাড়ি হারিয়ে আমরা দক্ষিণ গাজার তাঁবু ছেড়ে উত্তরে এসেও তাঁবুতেই উঠেছি।”

চলমান দুর্ভোগ এবং প্রতিক্রিয়া

গাজার ক্ষৌরকার মোহাম্মদ ইমাদ আল-দীন বাড়ি ফিরে দেখেন, তাঁর স্যালুন লুট হয়েছে এবং বাড়িটি ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে এক ফিলিস্তিনি জানান, তাঁর ভাই বাড়ি ফিরতে নিষেধ করেছেন, কারণ ফিরে যাওয়ার পর মানুষ রাস্তায় ঘুমাচ্ছে, তাদের সাহায্যের কেউ নেই।

অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী ও ছোট মেয়েকে নিয়ে গাজার উত্তরে যাওয়ার চিন্তা করছেন এমন এক ব্যক্তি বলেন, “আমি জানি, আমাদের বাড়ির আশপাশের সব ধ্বংস হয়ে গেছে। তবু আশা করি, একদিন যুদ্ধ শেষ হবে এবং ধ্বংসস্তূপের ওপর আবার সব নির্মাণ করা যাবে।”

গাজার মানুষ যুদ্ধবিরতির পর নিজেদের ঘরে ফিরলেও তাদের বেশিরভাগই পাচ্ছেন শুধু ধ্বংসস্তূপ আর অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। তবুও, এই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাশা, একদিন যুদ্ধ শেষ হবে এবং তারা তাদের জীবন নতুন করে গড়ে তুলতে পারবেন। তবে এই দীর্ঘমেয়াদি সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা এবং শান্তি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি।

Leave a Reply