
ভয়াবহ হতে যাচ্ছে রোহিঙ্গা সংকট
মিয়ানমার থেকে নিপীড়ন-নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের জন্য মার্কিন অনুদান বন্ধ হতে যাচ্ছে। গত বছর ইউক্রেন ও গাজায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে মার্কিন অনুদানের পরিমাণ কমানো হলেও পুরোপুরি বন্ধ করা হয়নি। তবে, গত সোমবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেওয়ার পর নতুন নির্বাহী আদেশে মার্কিন সরকার বিশ্বব্যাপী নতুন অনুদান ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করেছে, যার মধ্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগণের সহায়তা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকট আরো কঠিন হতে পারে, কারণ রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানই ছিল সবচেয়ে বড় সহায়তা।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান এবং অস্ট্রেলিয়া রোহিঙ্গাদের প্রধান দাতা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। গত সেপ্টেম্বর মাসে রোহিঙ্গাদের জন্য ২০ কোটি মার্কিন ডলার সহায়তার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যার মধ্যে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার ইউএসএআইডি এবং ৭ কোটি ডলার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছিল। তবে, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন নির্দেশনার পর অনুদান বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে বাংলাদেশে থাকা লাখ লাখ রোহিঙ্গার খাদ্য, স্বাস্থ্যসেবা এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হতে পারে।
এই পরিস্থিতি, যেখানে ২০১৭ সালের পর প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে, তাদের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাস করছেন, এবং তাদের জন্য আন্তর্জাতিক সাহায্য ক্রমেই কমছে। গত বছর রোহিঙ্গাদের জন্য ৮৭ কোটি মার্কিন ডলার অনুমোদিত হয়েছিল, যা তাদের প্রয়োজনীয় তহবিলের ৫০ শতাংশও ছিল না। এর পরিণতি হিসেবে রোহিঙ্গাদের জনপ্রতি বরাদ্দ কমে গেছে, এবং যদি মার্কিন অনুদান আরও কমে যায়, তবে এই পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে।
এছাড়া, মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও বিশ্বব্যাপী ৯০ দিনের জন্য নতুন অনুদান বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন এবং এই সময়ে কোন নতুন তহবিল অনুমোদন বা বিদ্যমান চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোর সুযোগ থাকবে না। যদিও মিসর ও ইসরায়েলকে এর আওতার বাইরে রাখা হয়েছে, ইউক্রেনসহ অন্যান্য দেশগুলির জন্য সহায়তা পেতে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মার্কিন অনুদান বন্ধ হওয়া মানবিক সহায়তার জন্য এক বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা জশ পল এই সিদ্ধান্তের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, যা বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে গভীর প্রভাব ফেলবে। ডেভ হার্ডেনের মতে, এই পদক্ষেপ পানীয় জল, স্যানিটেশন এবং আশ্রয়সহ গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন প্রকল্পগুলিতে বিঘ্ন ঘটাতে পারে।
মোট কথা, যুক্তরাষ্ট্রের অনুদান বন্ধ হওয়ার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সংকটকে আরো জটিল করে তুলবে, এবং এর প্রভাব শুধু রোহিঙ্গা জনগণের উপরই পড়বে না, বরং স্থানীয় বাংলাদেশি জনগণের জীবনযাত্রার ওপরও তার নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।