
প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব
সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এ লক্ষ্যে কমিশন বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনার বিষয়ে বিএনপিসহ বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল এবং অংশীজনদের মধ্যে ঐকমত্য রয়েছে। তবে প্রস্তাব বাস্তবায়নের পদ্ধতি নিয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে এ বিষয়ে ঐকমত্যের চেষ্টা করা হবে।
প্রস্তাবের মূল বিষয়বস্তু
১. রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি:
- প্রধান বিচারপতি, উচ্চ আদালতের বিচারপতি, মহাহিসাব নিরীক্ষকসহ (CAG) বিভিন্ন সাংবিধানিক পদের নিয়োগে রাষ্ট্রপতিকে ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নেওয়া বাধ্যতামূলক থাকবে না।
- জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের সুপারিশ।
২. জরুরি অবস্থার ঘোষণা:
- রাষ্ট্রপতি কেবল জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে না।
৩. ক্ষমতার ভারসাম্যের জন্য নতুন প্রস্তাবনা:
- প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা ও ক্ষমতাসীন দলের প্রধান—তিনটি পদ একই ব্যক্তির হাতে থাকবে না।
- বিদ্যমান ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে অর্থবিল ছাড়া অন্য বিষয়ে সংসদ সদস্যদের দলীয় সিদ্ধান্তের বিপক্ষে ভোট দেওয়ার সুযোগ রাখা।
- রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইলেকটোরাল কলেজ ব্যবস্থার প্রস্তাব, যেখানে সংসদ সদস্য ছাড়াও জেলা ও সিটি করপোরেশন সমন্বয় কাউন্সিলের ভোট বিবেচনায় নেওয়া হবে।
রাজনৈতিক দলের প্রতিক্রিয়া
বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী, সিপিবিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংবিধান সংস্কারের এই প্রস্তাবগুলোকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তবে কমিশনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় দলগুলো এখনো বিস্তারিত মতামত দেয়নি।
পরবর্তী পদক্ষেপ
ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। এই সংলাপে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার প্রস্তাবসহ অন্যান্য সুপারিশ নিয়ে আলোচনা হবে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম এ মতিন বলেছেন, “বিদ্যমান ব্যবস্থায় রাষ্ট্রপতির প্রায় সব কাজ প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে করতে হয়। প্রধানমন্ত্রীর নিরঙ্কুশ ক্ষমতা কমিয়ে ভারসাম্য আনার জন্য এ ধরনের প্রস্তাব ইতিবাচক।”
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা সীমিত হয়ে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা হবে। তবে রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে প্রস্তাবগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হবে কি না, তা এখনো প্রশ্নসাপেক্ষ।