
‘সস্তা বাংলা সিনেমা’, নেটফ্লিক্সের তালিকার শীর্ষে
অ্যাড ভিতাম (২০২৫), পরিচালনা রোডলফি লাউগা, অ্যাকশন থ্রিলার ঘরানার একটি ফরাসি সিনেমা যা সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেয়েছে। সিনেমার গল্প এবং চিত্রনাট্য, যা মূলত একটি সস্তা থ্রিলার ছকে বাঁধা, অনেক ক্ষেত্রেই দর্শককে হতাশ করেছে। সিনেমাটি দেখার পর দর্শকদের যে প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকে, তা হলো “এ তো সস্তা বাংলা সিনেমা” বা এরকম কিছু। তবে আশ্চর্যজনকভাবে, এটি নেটফ্লিক্সের অ-ইংরেজিভাষী সিনেমার বৈশ্বিক তালিকায় শীর্ষে রয়েছে।
গল্পের দুর্বলতা
গল্পের দিক থেকে অ্যাড ভিতাম একেবারে চর্বিতচর্বণ। এটি একটি পুরনো ও ক্লিশে গল্প নিয়ে তৈরি হয়েছে, যেখানে প্রধান চরিত্র ফ্রাঙ্ক (গিওম কানে) নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে চাকরি হারান এবং এক অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে শুরু করেন। ফ্রাঙ্কের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ এসে পৌঁছায় এবং সেখান থেকে গল্পের মূল উত্তেজনা তৈরি হয়, যেখানে অপরাধীরা ফ্রাঙ্কের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে অপহরণ করে।
এই ধরনের গল্প আমাদের অনেক সিনেমাতে দেখা গেছে, এবং এখানে কোনো নতুনত্ব নেই। একের পর এক এমন গল্প পৃথিবীর নানা প্রান্তে নির্মিত হয়েছে, তাই দর্শক এই ধরনের কাহিনীতে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। বিশেষত যখন গল্পটি কোনো নতুন উপস্থাপনা বা বুদ্ধিদীপ্ত মোচর নিয়ে আসে না, তখন সিনেমার মজা প্রায় চলে যায়।
চিত্রনাট্য ও অ্যাকশন
চিত্রনাট্যের কোনও চমক বা গভীরতা নেই। সায়েন্স ফিকশন বা হাই-প্রোফাইল অ্যাকশন সিনেমাগুলির মতো থ্রিলার উপাদান না থাকায়, এই সিনেমা দর্শককে আকর্ষণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। সিনেমায় বেশ কিছু অ্যাকশন দৃশ্য রয়েছে, তবে সেগুলি খুবই সাধারণ এবং প্রতিদিনের থ্রিলার সিনেমার মতো। একটি ছাদে ধাওয়ার দৃশ্য ছাড়া, আর কোনো দৃশ্য মনে রাখার মতো নয়। বিশেষত থ্রিলার ঘরানায় যে উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চ আশা করা যায়, তা এখানে পুরোপুরি অনুপস্থিত।
পারিবারিক সম্পর্ক ও আবেগ
আজকাল অনেক থ্রিলার সিনেমা পরিবারের সম্পর্ক এবং আবেগের দিকটি তুলে ধরে, তবে অ্যাড ভিতাম-এ সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফ্রাঙ্ক ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর মধ্যে যে সম্পর্কের গুরুত্ব দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে, তা ঠিকমতো ফুটে ওঠেনি। দর্শক হয়তো নায়ক-নায়িকার সম্পর্কের মধ্যে কিছু আবেগ খুঁজে পেতে পারতেন, কিন্তু নির্মাতা সেই চেষ্টাটিকেও সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে পারেননি।
অভিনয়
গিওম কানে ফ্রাঙ্ক চরিত্রে অভিনয় করেছেন, কিন্তু তাঁর অভিনয়ও কোনো বিশেষ দাগ রেখে যায়নি। চরিত্রের মধ্যে যে শক্তি বা গভীরতা থাকা উচিত ছিল, তা তাঁর অভিনয়ে দেখা যায়নি। অন্যদিকে, স্টেফানি কাইয়ার অভিনয়ও তেমন কিছু মনে রাখার মতো নয়।
সমালোচনামূলক প্রতিক্রিয়া
সমালোচকদের মতামতও তেমন প্রশংসনীয় নয়। রটেন টোমাটোজে সিনেমাটি মাত্র ৪২% ইতিবাচক রেটিং পেয়েছে, যেখানে গড় রেটিং মাত্র ৪.৫। এটি সিনেমাটির দুর্বলতা এবং দর্শকদের মাঝে হতাশা প্রকাশের একটি বড় উদাহরণ।
দর্শকের প্রতি প্রতিক্রিয়া
তবে সমালোচকরা যতই না বলুন, সাধারণ দর্শকদের মধ্যে এই সিনেমাটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এর একটি কারণ হতে পারে সিনেমার সহজ-সরল গল্প এবং তার সংক্ষিপ্ত দৈর্ঘ্য (৯৬ মিনিট)। সারা দুনিয়ায় সাধারণ দর্শকরা যেহেতু এতটুকু সহজ বিনোদন খুঁজে পান, তাই এই সিনেমাটি তাদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
অ্যাড ভিতাম একটি সস্তা থ্রিলার সিনেমা, যেখানে কোনো নতুনত্ব নেই এবং সিনেমার মূল উদ্দেশ্য সফলভাবে পূর্ণ হয়নি। অ্যাকশন এবং থ্রিলারের ক্ষেত্রে যে উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চ প্রত্যাশা করা যায়, তা এ সিনেমায় পাওয়া যায়নি। তবে, এর সহজগতি, সংক্ষিপ্ততা এবং পরিচিত গল্প হয়তো কিছু দর্শককে আকৃষ্ট করেছে, কিন্তু সমালোচকরা সিনেমাটির একেবারে অপছন্দ করেছেন। মোটামুটি বলতে গেলে, এটি ‘সস্তা বাংলা সিনেমা’ বা ‘সস্তা থ্রিলার’ হিসেবে আখ্যায়িত করা চলে।