July 8, 2025
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর শীর্ষ দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ

জানু ২২, ২০২৫

ইসরায়েলের সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারর্জি হালেভি এবং গাজার দায়িত্বপ্রাপ্ত দক্ষিণাঞ্চলীয় সামরিক কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ইয়ারন ফিঙ্কেলম্যানের পদত্যাগের ঘটনা রাজনৈতিক এবং সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এই পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের কয়েকদিনের মধ্যে, যা অনেকেই ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার সঙ্গে সম্পর্কিত হিসেবে দেখছেন। নিচে এর বিশ্লেষণ করা হলো:

১. পদত্যাগের কারণ এবং দায় স্বীকার:

  • ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরায়েলের ব্যাপক ক্ষতির পর, সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ের এই দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ একটি বড় ঘটনা হিসেবে দেখা যাচ্ছে। হালেভি নিজেই সেনাবাহিনীর ব্যর্থতার জন্য দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সামরিক বাহিনীর “উল্লেখযোগ্য সাফল্যের” সময়েও যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। এটি ইসরায়েলের বাহিনী ও এর নেতৃত্বের জন্য একটি বড় চাপ এবং তাৎপর্যপূর্ণ সংকেত, কারণ দেশের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তারা তাদের কার্যকারিতা বা যুদ্ধের ফলাফলের জন্য দায় নিতে প্রস্তুত হয়েছেন।
  • হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর, ইসরায়েলীয় সেনাবাহিনী অনেক বড় পরিসরে প্রতিশোধমূলক বিমান ও স্থল হামলা চালিয়েছে, তবে ওই হামলার মাধ্যমে হামাসের ক্ষমতা পুরোপুরি ধ্বংস করা সম্ভব হয়নি, এমন বক্তব্য এসেছে হালেভির পদত্যাগপত্রে।

২. যুদ্ধের কৌশল ও লক্ষ্য:

  • হালেভি জানিয়েছেন, ইসরায়েল বাহিনী যুদ্ধের সময় হামাস ও এর শাসন ক্ষমতাকে আরও ধ্বংস করতে এবং গ্যাজা থেকে জিম্মিদের ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াই চালিয়ে যাবে। এটি ইসরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্যবস্তু এবং তাদের সেনাবাহিনীর অব্যাহত প্রতিশ্রুতি হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যদিও যুদ্ধের ফলাফল নির্ধারণে সময় লাগছে। এই পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ইসরায়েলের বাহিনী পরবর্তী কৌশল গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।

৩. হামাসের হামলা এবং ইসরায়েলি প্রতিক্রিয়া:

  • ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা একটি অভূতপূর্ব ঘটনা ছিল, যেখানে ১ হাজার ২১০ জন ইসরায়েলিকে হত্যা এবং ২৫১ জনকে গাজায় বন্দি করা হয়। এরপর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় আক্রমণ চালাতে থাকে, যার ফলে গাজায় প্রচুর ধ্বংসযজ্ঞ হয়। ইসরায়েলের বিমান হামলায় অসংখ্য ভবন, হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদ ও শরণার্থী শিবির ধ্বংস হয়ে যায়, যা মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে।
  • এই হামলায় গাজার ৪৬ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং লক্ষাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। যুদ্ধের কারণে প্রায় ২০ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, যা জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নারী ও শিশু।

৪. মানবিক বিপর্যয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া:

  • এই যুদ্ধের ফলে গাজার জনগণের ওপর যে মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে, তা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি করেছে। হাসপাতালে, স্কুলে এবং অন্যান্য সেবামূলক স্থানে হামলা চালানো, সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্দশা সৃষ্টি করা এবং শরণার্থীদের বৃহৎ সংখ্যা পৃথিবীর বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং জাতিসংঘের কাছ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে।
  • অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ইসরায়েলিরা তাদের সামরিক অভিযান চালানোর সময় আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে কিনা, এবং এর ফলে শুধু গাজাবাসীরাই নয়, ইসরায়েলের নিজস্ব জনগণের জন্যও কী পরিণতি অপেক্ষা করছে।

৫. বিশ্ব রাজনীতি ও পরবর্তী পদক্ষেপ:

  • ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের পদত্যাগের ঘটনাটি বিশ্ব রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ সংকেত হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটি ইসরায়েলি সরকার এবং সামরিক বাহিনীর সামনে বড় ধরনের রাজনৈতিক ও কৌশলগত প্রশ্ন তুলে ধরছে। বিশেষত, যুদ্ধের ধারাবাহিকতা এবং এর প্রভাব, তাদের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর আকর্ষণ করছে।
  • পদত্যাগের ঘটনা এবং সেনাবাহিনীর কৌশলগত পর্যালোচনা, ইসরায়েলি সমাজের মধ্যে একটি নতুন রাজনৈতিক আলোচনা ও সম্ভাব্য পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে, বিশেষ করে যখন হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের লক্ষ্য এখনও পূর্ণভাবে অর্জিত হয়নি।

ইসরায়েলের সেনাপ্রধানের পদত্যাগের ঘটনা এবং সামরিক বাহিনীর চলমান কৌশল দেখাচ্ছে যে, যুদ্ধের ফলাফল এবং গাজার পরিস্থিতি ইসরায়েলের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। এটি শুধু ইসরায়েলি রাজনৈতিক নেতাদের জন্য নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার ও শান্তির পক্ষে কাজ করা সংগঠনগুলোর জন্যও এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত।

Leave a Reply