
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নিয়ে চার রিভিউ আবেদনের শুনানি ৯ ফেব্রুয়ারি
বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক বিষয়, যা রাজনৈতিক ও আইনগত প্রেক্ষাপটে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কিত। ২০১১ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এই ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়। এই রায়ের পুনর্বিবেচনার জন্য একাধিক আবেদন বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
শুনানির তারিখ ও প্রেক্ষাপট
১. আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের বেঞ্চ ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি শুনানির নতুন তারিখ নির্ধারণ করেন। 2. এর আগে, আপিল বিভাগ গত বছরের ১ ডিসেম্বর এই আবেদনগুলোর শুনানির জন্য ১৯ জানুয়ারি দিন ধার্য করেছিলেন। কিন্তু সময়ের আবেদন অনুযায়ী নতুন তারিখ নির্ধারণ করা হয়।
রিভিউ আবেদনের মূল বিষয়
১. পঞ্চদশ সংশোধনী ও ত্রয়োদশ সংশোধনী:
- ত্রয়োদশ সংশোধনীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল।
- পঞ্চদশ সংশোধনী এই ব্যবস্থা বিলোপ করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ক্ষমতা হস্তান্তরের বিধান রেখে সংবিধান সংশোধন করে।
- রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের কারণ:
- আবেদনকারীরা পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা, এর সঙ্গে সংবিধানের সাংঘর্ষিকতা, এবং গণভোটের বিধান পুনর্বহালের দাবি উত্থাপন করেছেন।
রিভিউ আবেদনকারীরা
১. বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
২. বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
৩. সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক।
4. নওগাঁর বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন।
প্রধান দাবি ও যুক্তি
১. পূর্ণাঙ্গ রায়ের প্রাপ্তি:
- বিএনপি পক্ষ দাবি করেছে, পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ছাড়া শুনানি করা সম্ভব নয়।
- হাইকোর্ট ইতোমধ্যে পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু ধারাকে সাংবিধানিকভাবে সাংঘর্ষিক বলে ঘোষণা করেছে।
- গণভোটের প্রয়োজনীয়তা:
- আবেদনকারীরা গণভোটের বিধান পুনর্বহাল করার দাবি জানিয়েছেন, যা পঞ্চদশ সংশোধনীতে বাদ দেওয়া হয়েছিল।
সংবিধানের সংশোধনীগুলোর ইতিহাস
১. ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনী:
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানে যুক্ত হয়।
- ২০০৪ সালে হাইকোর্ট এটি বৈধ ঘোষণা করে।
- ২০১১ সালে পঞ্চদশ সংশোধনী:
- আপিল বিভাগ ত্রয়োদশ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে।
- পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলোপ করা হয়।
আদালতের রায় ও এর প্রভাব
১. ২০১১ সালের আপিল বিভাগের রায়:
- সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করা হয়।
- এর ফলে ক্ষমতা হস্তান্তরে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
- রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:
- তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকে বিভিন্ন নির্বাচনে নিরপেক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা গেছে।
- গণতন্ত্রের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বিবেচনার রিভিউ আবেদন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনগত প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এ নিয়ে আদালতের চূড়ান্ত রায় কেবল আইন নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে গভীর প্রভাব ফেলবে। এর ফলে গণতন্ত্র, নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং জনআস্থা পুনরুদ্ধারের সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে। ৯ ফেব্রুয়ারির শুনানি এ বিষয়ে নতুন দিকনির্দেশনা দেবে বলে আশা করা যায়।