নতুন বছরের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে পরিবর্তন
আগামীকাল শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের পাঠ্যবইয়ে সাহিত্য ও ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনা হয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার ঘোষণা, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার বিষয়বস্তু সংযোজন-বিয়োজন করা হয়েছে। এ বছর ৪০ কোটিরও বেশি বই ছাপানো হয়েছে।
বইয়ের পরিমাণ
- প্রাক-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবই: প্রায় ৯ কোটি ৬৪ লাখ।
- মাধ্যমিক স্তরে (মাদ্রাসার ইবতেদায়িসহ): ৩০ কোটি ৯৬ লাখ।
পাঠ্যপুস্তকের মানোন্নয়নে ৪১ বিশেষজ্ঞ কাজ করেছেন এবং ৪৪১টি বই পরিমার্জন করা হয়েছে।
ইতিহাসে পরিবর্তন
নতুন বইগুলোতে স্বাধীনতার ঘোষণা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে।
- পঞ্চম শ্রেণির ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ে “আমাদের মুক্তিযুদ্ধ” শীর্ষক অধ্যায়ে প্রথমবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাশাপাশি মওলানা ভাসানীর ছবি এবং জাতীয় চার নেতার ছবি স্থান পেয়েছে।
- ‘পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা’ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে:
- ২৬শে মার্চ ১৯৭১ তারিখে মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং পরের দিন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আবারও ঘোষণা দেন।
- পুরোনো বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণায় শুধু বঙ্গবন্ধুর নাম ছিল এবং উল্লেখ ছিল তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার আগে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান
গণ-আন্দোলন ও সংগ্রামের শহীদদের স্মরণে পঞ্চম শ্রেণির ‘আমার বাংলা বই’-এ নতুন করে ‘আমরা তোমাদের ভুলব না’ প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে। এতে শহীদ আবু সাঈদ, মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধসহ বিভিন্ন পর্যায়ের শহীদদের স্মরণ করা হয়েছে।
জাতীয় প্রতীক ও সংগীতের বিন্যাস
পাঠ্যবইয়ে জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীতের নিয়মাবলি বইয়ের প্রথম পৃষ্ঠার পরিবর্তে শেষের দিকে স্থানান্তর করা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের নায়কদের গুরুত্ব
পাঠ্যবইয়ে এবার মুক্তিযুদ্ধে অবহেলিত নায়কদের গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অতিবন্দনা পরিহার করে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।
এনসিটিবির বক্তব্য
এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান বলেন,
- পাঠ্যবইয়ে ইতিহাস ও সাহিত্যে একটি ভারসাম্য আনা হয়েছে।
- জুলাই বিপ্লবের বিষয় গণদাবি মেনে বাংলা ও ইংরেজি বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
- মুক্তিযুদ্ধে অন্যান্য নায়কদের যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে অতিরিক্ত রাজনৈতিক প্রচারণা পরিহার করা হয়েছে।
নতুন পাঠ্যবইয়ের পরিবর্তনগুলো শিক্ষার্থীদের ইতিহাস সম্পর্কে গভীর ধারণা দেবে এবং বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করবে। এটি দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সামগ্রিক ও সঠিক ইতিহাস জানাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।