১৫ বছরে ৯০% বিচারক নিয়োগে অনাচার!
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ নিয়ে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশ-২০২৪ নিয়ে সমালোচনা এবং সংশোধনী প্রস্তাব তুলে ধরেছেন বিভিন্ন পেশার বিশিষ্টজনরা। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আয়োজিত এই মতবিনিময় সভায় স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য এবং জবাবদিহিমূলক আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা হয়।
সভার সভাপতির বক্তব্য
সভাপতিত্ব করেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতের বিচারকদের দায়িত্ব জনগণের মৌলিক ও মানবাধিকার রক্ষা করা। সংবিধানে তাদের অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তাই মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্যতাসম্পন্ন বিচারক নিয়োগ দিতে একটি শক্তিশালী আইন প্রয়োজন।”
তিনি অভিযোগ করেন, গত ১৫ বছরে উচ্চ আদালতে ৯০ শতাংশ বিচারক নিয়োগে অনিয়ম হয়েছে। অনেক অযোগ্য প্রার্থীকে বিচারক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে, যা বিচার বিভাগের মান ক্ষুণ্ণ করেছে। তিনি বলেন, “এখন সময় এসেছে উচ্চ আদালতকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার।”
বিশিষ্টজনদের মতামত
- সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান (উপদেষ্টা, পরিবেশ মন্ত্রণালয়):
উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। দলীয় রাজনীতির প্রভাব থেকে মুক্ত রেখে দক্ষ বিচারক নিয়োগের আহ্বান জানান তিনি। - অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহউদ্দিন চৌধুরী:
তিনি বলেন, “দরখাস্ত করে উচ্চ আদালতের বিচারক হতে হবে, এটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বিচারক নিয়োগের ক্ষেত্রে ঘুষ-লেনদেন বন্ধ করা এবং সততা বজায় রাখা অপরিহার্য।” সুপ্রিম কোর্ট বার থেকে মেধাবী ও যোগ্য বিচারক নিয়োগের পরামর্শ দেন তিনি। - অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান:
তিনি প্রস্তাবিত অধ্যাদেশকে ভালো বলেছেন। তবে বর্তমান সরকারের আইন প্রণয়ন করার নৈতিক অধিকার আছে কিনা, তা ভেবে দেখার পরামর্শ দেন। - জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন:
উচ্চ আদালতের বিচারকদের স্বাধীনতার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিচারকরা স্বাধীন বলে দাবি করলেও বাস্তবে তারা স্বাধীনভাবে বিচার করতে পারেন না।” - সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি এএম মাহবুবউদ্দিন খোকন:
বিচারক নিয়োগে মেধাবী এবং দক্ষ প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে মত দেন তিনি।
অন্যান্য বক্তাদের বক্তব্য
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আইন সচিব শেখ আবু তাহের, সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইন, অধ্যাপক বোরহানউদ্দিন খান, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, ব্যারিস্টার সারা হোসেন এবং জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম।
সভার বক্তারা একমত যে উচ্চ আদালতে বিচারক নিয়োগের জন্য একটি স্বচ্ছ, শক্তিশালী এবং জবাবদিহিমূলক আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাভাবিক কার্যক্রম এবং জনগণের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে দলীয় প্রভাব মুক্ত একটি বিচারক নিয়োগ প্রক্রিয়া অত্যন্ত জরুরি।