সিরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার ‘আয়নাঘর’ ঘুরে বিবিসি সাংবাদিকের লোমহর্ষক বর্ণনা
সিরিয়ার মানুষদের জন্য এক ভয়ংকর জায়গার নাম রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সদর দফতরের বেসমেন্ট। এটি এমন একটি স্থান, যেখানে সাবেক সরকারের আমলে অসংখ্য মানুষকে আটক ও নির্যাতন করা হতো। বিবিসি অ্যারাবিক সার্ভিসের সংবাদদাতা ফেরাস কিলানি এই স্থাপনায় প্রবেশ করে সেই নির্মম বাস্তবতার সাক্ষাৎ পান, যা বহির্বিশ্বে খুব কমই প্রকাশিত হয়েছে।
ভয়ংকর কারাগারের ভেতরের দৃশ্য
এই বেসমেন্টে সারিবদ্ধ পুরু ইস্পাতের দরজার পেছনে রয়েছে ছোট ছোট কক্ষ, যেগুলো মাত্র দুই মিটার লম্বা ও এক মিটার চওড়া। কক্ষগুলোর ময়লা দেয়ালে দেখা যায় গাঢ় দাগ। সূর্যের আলো কেবল দেয়ালের উঁচুতে থাকা ছোট ঝাঁঝরি দিয়ে সামান্য প্রবেশ করত, যা ছিল বন্দিদের একমাত্র আলোর উৎস। এ ধরনের কক্ষে মাসের পর মাস মানুষদের আটকে রেখে তাদের ওপর চালানো হতো নির্মম নির্যাতন।
নির্যাতনের কেন্দ্রস্থল
এই ভয়ংকর স্থানটি দামেস্কের কেন্দ্রস্থলে কাফর সউসা এলাকায় একটি ব্যস্ত রাস্তায় অবস্থিত। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করলেও, অনেকেই জানতেন না তাদের পাশেই গোপন কারাগারে চলেছে এ ধরনের নির্যাতন।
একটি করিডোরে পড়ে থাকতে দেখা যায় ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্টের ছিন্নভিন্ন ছবিগুলো। এছাড়াও গোয়েন্দা সংস্থার ফাইলের স্তূপ মেলে, যেগুলো বহু মানুষের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে ব্যবহৃত হতো। বন্দিদের সাময়িকভাবে এখানে আটকে রেখে পরে পাঠানো হতো কুখ্যাত সাইদনায়া কারাগারে।
নথি ও তথ্যের ভাণ্ডার
স্টেট সিকিউরিটি সদর দফতর থেকে কয়েকশো মিটার দূরে অবস্থিত আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থা—জেনারেল ইন্টেলিজেন্স ডিরেক্টরেট। সেখানে মেলে বিশাল একটি কম্পিউটার সার্ভার রুম, যেখানে অত্যাধুনিক ডিজিটাল সিস্টেমের পাশাপাশি বহু পুরনো নথি সযত্নে রাখা হয়েছে।
দেয়ালে থাকা লোহার আলমারিগুলোতে গাদাগাদি করে রাখা ফাইল এবং নোটবই প্রমাণ করে যে, শাসন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার সময় এগুলো ধ্বংসের সুযোগ পাননি কর্মকর্তারা। এমনকি গুলির খালি খোসা ও নানা ধরনের অস্ত্রও পাওয়া গেছে।
নির্যাতনের বিরুদ্ধে বিচার ও সম্ভাব্য প্রভাব
এই স্থাপনাগুলো থেকে উদ্ধার হওয়া নথি ও রেকর্ড ভবিষ্যতে সিরিয়ার নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্তদের বিচারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে দামেস্ক নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী এইচটিএস-এর নেতা আহমেদ আল-শারা ঘোষণা করেছেন, নির্যাতন ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হবে।
আঞ্চলিক প্রভাব
এই নথিগুলো শুধুমাত্র সিরিয়ার ভেতরেই নয়, আশপাশের দেশগুলোতেও বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। জর্ডান, লেবানন এবং ইরাকের সঙ্গে আসাদ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কের অনেক গোপন তথ্য এতে থাকতে পারে।
নথিগুলো প্রকাশ্যে এলে পুরো অঞ্চলেই বড় ধাক্কা লাগার সম্ভাবনা। সাবেক সরকারের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কের এ ধরনের বিশদ তথ্য প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে আঞ্চলিক রাজনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসতে পারে।