সংস্কার নিয়ে যত সময় যাবে, সমস্যা বাড়বে: মির্জা ফখরুল
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ (এফবিএস) আয়োজিত জাতীয় সংলাপ একটি তাৎপর্যপূর্ণ পদক্ষেপ। দুই দিনব্যাপী এই সংলাপে ২০টি রাজনৈতিক দল ও জোট, বিশিষ্ট নাগরিক, শিক্ষার্থী, এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নিচ্ছেন। “ঐক্য, সংস্কার ও নির্বাচন” শীর্ষক সংলাপের প্রথম দিনে বিস্তৃত আলোচনায় উঠে এসেছে বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে রাজনৈতিক কাঠামো সংস্কার এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের বিষয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য
সংলাপের প্রথম দিনের ‘ঐক্য কোন পথে’ অধিবেশনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যে বলেন:
- সংস্কার ও নির্বাচন প্রসঙ্গে বিএনপির অবস্থান:
- বিএনপি নির্বাচন ও সংস্কারের পক্ষে আন্তরিক। তবে প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়।
- দীর্ঘ ১৭ বছরে বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী গুম, খুনের শিকার হয়েছে, কিন্তু তখন খুব কম মানুষ তাদের পাশে ছিল।
- বিএনপি চায়, সবাইকে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে।
- প্রশাসন ও কাঠামোগত সংকট:
- প্রশাসন এখনও ফ্যাসিবাদী মানসিকতায় আবদ্ধ। প্রয়োজনীয় কাঠামোগত পরিবর্তন ছাড়া দ্রুত কোনো পরিবর্তন সম্ভব নয়।
- সরকারি আমলাতন্ত্রের অদক্ষতার উদাহরণ হিসেবে ছাত্রদের চিকিৎসার বিলম্বিত ব্যবস্থার কথা তুলে ধরেন।
- গণতন্ত্র উপযোগী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ছাড়া কাঙ্ক্ষিত সংস্কার ও উন্নয়ন সম্ভব নয়।
- ঐতিহাসিক পরিপ্রেক্ষিত:
- একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ধারাবাহিক সংগ্রামের কথা স্মরণ করিয়ে দেন।
- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ছাত্রদের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন করেন এবং বলেন, এই আত্মত্যাগ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য একটি নতুন সুযোগ তৈরি করেছে।
- জনগণের অংশগ্রহণের গুরুত্ব:
- জনগণকে বাদ দিয়ে সংস্কার চাপিয়ে দেওয়ার নীতি কখনোই সফল হবে না।
- জনগণের ঐক্য ও সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া টেকসই রাজনৈতিক সংস্কার সম্ভব নয়।
মূল বিষয়
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে উঠে আসা মূল বার্তা হলো:
- সংস্কার এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঐক্য ও কাঠামোগত উন্নয়ন অত্যন্ত জরুরি।
- প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্র উপযোগী করে তোলা ছাড়া ওপর থেকে চাপিয়ে দেওয়া কোনো উদ্যোগ কার্যকর হবে না।
- জনগণকে এই প্রক্রিয়ার কেন্দ্রে রাখতে হবে, যাতে তারা সরাসরি অংশগ্রহণের মাধ্যমে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে পারে।
মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে গণতন্ত্র, ঐতিহাসিক সংগ্রাম, এবং কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। এই জাতীয় সংলাপের লক্ষ্য যদি গণতন্ত্রের জন্য কাঠামোগত সংস্কারের পথনির্দেশনা তৈরি করা হয়, তবে এটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক অগ্রগতির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।