আজারবাইজানের বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ছড়িয়ে পড়া ছবির বাইরেও কিছু ইঙ্গিতের কথা বললেন কারবি
আজারবাইজান এয়ারলাইনসের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ (ফ্লাইট জে২-৮২৪৩) গত বুধবার কাজাখস্তানের আকতাউ শহরের কাছে বিধ্বস্ত হয়। উড়োজাহাজে থাকা ৬৭ জন আরোহীর মধ্যে ৩৮ জন নিহত হন, বেঁচে যান ২৯ জন। এ দুর্ঘটনার জন্য রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দায়ী হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
দুর্ঘটনার পটভূমি
উড়োজাহাজটি আজারবাইজানের রাজধানী বাকু থেকে রাশিয়ার চেচনিয়ার গ্রোজনি শহরের উদ্দেশে রওনা করেছিল। গ্রোজনির আকাশে পৌঁছানোর পর, এটি তিনটি বিস্ফোরণের মুখোমুখি হয় বলে বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা জানিয়েছেন। এরপর জরুরি অবতরণের চেষ্টা করলে উড়োজাহাজটিকে কাস্পিয়ান সাগরের ওপর দিয়ে কাজাখস্তানের দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
আজারবাইজানের পরিবহনমন্ত্রী রাশাদ নবিয়েভ দাবি করেছেন, উড়োজাহাজটি বাইরে থেকে হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছিল। পাইলট গ্রোজনিতে অবতরণের অনুমতি চাইলে সেটিকে নিকটস্থ কোনো বিমানবন্দরে নামতে দেওয়া হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ
হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জন কারবি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র দুর্ঘটনার জন্য রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ভূমিকার বিষয়ে প্রাথমিক ইঙ্গিত পেয়েছে। তিনি আরও জানান, এ বিষয়ে তদন্তে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
আজারবাইজানের প্রতিক্রিয়া
বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের ঘটনায় রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো অভিযোগ তোলেনি আজারবাইজান। তবে সরকার সমর্থক আইনপ্রণেতা রাসিম মুসাবেকভ দাবি করেছেন, উড়োজাহাজটি গ্রোজনির আকাশে রাশিয়ার ভূখণ্ডের ওপর ভূপাতিত করা হয়েছে।
বিমান বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার ইলেকট্রনিক জ্যামিং সিস্টেম উড়োজাহাজটির জিপিএস নষ্ট করে দেয়, ফলে এটি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার শিকার হয়।
ক্রেমলিনের প্রতিক্রিয়া
ক্রেমলিন দুর্ঘটনার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “তদন্তের ফলাফল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না।”
রাশিয়ার বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার প্রধান বলেন, চেচনিয়ার পরিস্থিতি খুবই জটিল, কারণ ওই অঞ্চলে ইউক্রেন ড্রোন হামলা চালাচ্ছে।
বেঁচে যাওয়া আরোহীদের অভিজ্ঞতা
উড়োজাহাজের ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট জুলফুকার আসাদোভ জানিয়েছেন, চেচনিয়ার আকাশে উড়োজাহাজটি আঘাতপ্রাপ্ত হলে আরোহীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, “আমরা যাত্রীদের শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলাম, তখন আরেকটি আঘাত আসে। এতে আমি হাতে আঘাত পাই।”
পাইলটের দক্ষতার প্রশংসা
২৯ জন আরোহী বেঁচে যাওয়ার পেছনে পাইলটের দক্ষতা বড় ভূমিকা রেখেছে। আহতদের কাজাখস্তানে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আজারবাইজানের উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় রাশিয়ার ভূমিকা নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তীব্র আলোচনা চলছে। যদিও তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টি নিয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব নয়, তবে প্রাথমিক প্রমাণ রাশিয়ার আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করছে।