সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে চাই: প্রধান উপদেষ্টা
জাতীয় সংলাপ ২০২৪-এর উদ্বোধনী ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনে ফোরাম ফর বাংলাদেশ স্টাডিজ আয়োজিত এই দুই দিনব্যাপী সংলাপে তিনি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে বক্তব্য দেন।
সংস্কারের তাগিদ ও দ্রুত বাস্তবায়ন
ড. ইউনূস বলেন, দেশের জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন,
- ১৫টি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যারা জানুয়ারি মাসে প্রতিবেদন দেবে।
- প্রতিটি কমিশন তাদের সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের বিকল্পগুলো চিহ্নিত করে জাতির জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছি, যেখানে দ্রুত ঐক্যমতের ভিত্তিতে সংস্কারের কাজগুলো সম্পন্ন করতে হবে।”
তরুণ প্রজন্ম ও ভোটার বয়স
তরুণদের ভূমিকা উল্লেখ করে ড. ইউনূস ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব দেন। তার যুক্তি:
- তরুণদের সংখ্যা বেশি এবং তারা পরিবর্তনের প্রতি আগ্রহী।
- তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠতা সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে তিনি বলেন, নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যদি ভিন্ন হয়, সেক্ষেত্রে দেশের অধিকাংশ মানুষের মতামতের ভিত্তিতে ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে।
ঐক্যের শক্তি ও গণঅভ্যুত্থানের প্রেরণা
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন,
- “এই অভ্যুত্থান শুধু বাংলাদেশকে মুক্ত করেনি, আমাদের স্বপ্নকেও সাহসী করেছে।”
- তিনি গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তাদের আত্মত্যাগকে “নতুন বাংলাদেশ গঠনের প্রেরণা” হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, গত পাঁচ মাসে ঐক্য আরও শক্তিশালী হয়েছে এবং এর মাধ্যমে দেশের রূপান্তর পর্বে প্রবেশের অধিকার অর্জিত হয়েছে।
রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ
ড. ইউনূস বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার আহ্বান জানান। তার মতে:
- প্রতিটি নাগরিক যেন নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশের সুযোগ পান।
- নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সকলের জন্য সমান সুযোগ তৈরি করতে হবে।
- সংখ্যালঘু বা সংখ্যাগরিষ্ঠের পরিচিতি অপ্রাসঙ্গিক হবে; সবার পরিচয় হবে “আমি বাংলাদেশের নাগরিক।”
ফ্যাসিবাদ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের প্রত্যাশা
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন,
- “ফ্যাসিবাদ বাংলাদেশকে আদর্শভিত্তিক লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করেছিল। আমরা আবার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারের পথে কাজ করছি।”
তিনি বলেন, ঐক্য, সংস্কার এবং নির্বাচন—এই তিনটি লক্ষ্য পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত। এগুলোর যেকোনো একটির অভাবে দেশ এগোতে পারবে না।
সংস্কার ও নির্বাচনের সমান্তরাল প্রস্তুতি
ড. ইউনূস জানান,
- নির্বাচন কমিশন নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবে, আর সংস্কারে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
- “যারা ভোটার, তারা অংশ নেবেনই, কিন্তু ভবিষ্যৎ ভোটাররাও সংস্কারে অংশগ্রহণ করবেন।”
তিনি সংলাপের মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া খুঁজে বের করার আহ্বান জানান।
অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বক্তব্যে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গঠনে ঐক্যের অপরিহার্যতা, সংস্কারের জরুরিতা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতির প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হলো বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।”
এটি বাস্তবায়নে তিনি সকল রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক গোষ্ঠীর সক্রিয় অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।