
ভোটার হওয়ার বয়স ১৭ বছর হওয়া উচিত: ড. ইউনূস
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বক্তব্য দেশের বর্তমান সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি তরুণদের ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৭ বছর করার প্রস্তাব দিয়েছেন, যা একটি সাহসী এবং তরুণ প্রজন্মকে ক্ষমতায়িত করার উদ্যোগ হিসেবে দেখা যেতে পারে। এছাড়াও তার বক্তব্যে জাতীয় ঐক্য, সংস্কার এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের গুরুত্ব উঠে এসেছে। নিচে তার বক্তব্যের প্রধান দিকগুলো বিশ্লেষণ করা হলো:
১. তরুণদের ক্ষমতায়ন এবং ভোটার হওয়ার বয়স কমানোর প্রস্তাব
- ড. ইউনূস বলেছেন, তরুণরা পরিবর্তনের প্রতি বেশি আগ্রহী এবং তাদের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে তরুণদের সখ্যতাকে তিনি তাদের শক্তি হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
- ভোটার হওয়ার বয়স কমিয়ে ১৭ বছর করার প্রস্তাব নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পারে। তবে, এটি বাস্তবায়নের জন্য একটি বিস্তৃত জাতীয় আলোচনার প্রয়োজন।
২. জাতীয় ঐক্য এবং সংস্কার প্রক্রিয়া
- তিনি জাতীয় ঐকমত্য গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন এবং উল্লেখ করেছেন যে, একটি “জাতীয় ঐকমত্য কমিশন” ইতিমধ্যে কাজ করছে।
- জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে সংস্কারের প্রয়াস নিয়ে রাজনৈতিক, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলোতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার আহ্বান জানিয়েছেন।
- সংস্কারের প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করার বিষয়ে তিনি গণমানুষের মতামতকেও গুরুত্ব দিয়েছেন।
৩. বৈষম্যহীন অর্থনীতি ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন
- ড. ইউনূসের বক্তব্যে একটি সমতার ভিত্তিতে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
- তিনি বলেছেন, প্রতিটি নাগরিক যেন সুযোগ পায় এবং বৈষম্যের শিকার না হয়।
- নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরাও যেন নিজের সৃজনশীলতা প্রকাশ করে উদ্যোক্তা হওয়ার সুযোগ পান।
৪. ফ্যাসিবাদবিরোধী লড়াই এবং গণঅভ্যুত্থানের ভূমিকা
- জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শহীদদের প্রতি তিনি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন, তাদের আত্মদান অর্থবহ করতে হলে বৈষম্যহীন ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠন করতে হবে।
- এই আন্দোলন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক রূপান্তরের পথ খুলে দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
৫. বিশ্ব নাগরিকত্বের ধারণা
- ড. ইউনূস একটি বৃহৎ ধারণা উপস্থাপন করেছেন যেখানে বাংলাদেশের নাগরিকরা বৈশ্বিক নাগরিকত্বের দায়িত্ব পালন করবে।
- এটি একটি উন্নত মানসিকতার প্রতিফলন এবং তরুণ প্রজন্মকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সক্রিয় অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার ইঙ্গিত বহন করে।
সম্ভাব্য চ্যালেঞ্জ ও বাস্তবায়নের পথ
- ভোটার বয়স কমানোর প্রস্তাবটি সংবিধান ও আইন সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা সৃষ্টি করবে।
- তরুণদের রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়াতে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের গুরুত্ব দিতে হবে।
- জাতীয় ঐক্যের পথে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের সংঘাত একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
ড. ইউনূসের বক্তব্য দেশের ভবিষ্যৎ গঠনে একটি দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করে। তরুণদের ক্ষমতায়ন, সংস্কার, এবং বৈষম্যহীন রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠন বর্তমান বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই উদ্যোগগুলো কার্যকর করতে হলে একটি সমন্বিত জাতীয় পরিকল্পনা ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজন।