July 7, 2025
দুই বোনের সংগ্রাম ও বেদনার আখ্যান

দুই বোনের সংগ্রাম ও বেদনার আখ্যান

ডিসে ২৭, ২০২৪

আকরাম খানের তৃতীয় চলচ্চিত্র ‘নকশীকাঁথার জমিন’ মুক্তি পেয়েছে। এটি কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকের গল্প ‘বিধবাদের কথা’ অবলম্বনে নির্মিত। সিনেমাটি প্রান্তিক দুই নারীর সংগ্রামের গল্প তুলে ধরেছে, যেখানে সংলাপের চেয়ে নীরবতা ও অভিব্যক্তির মাধ্যমে যাতনা, দ্রোহ এবং গভীরতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

প্রান্তিক নারীর কণ্ঠস্বর

মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় সাধারণত পুরুষদের বীরত্বকেই তুলে ধরা হয়। তবে এই সিনেমা প্রান্তিক নারীদের লড়াইয়ের গল্প বলেছে। কেন এ গল্প নির্বাচন করলেন, এ প্রশ্নে নির্মাতা আকরাম খান বলেন,

‘মুক্তিযুদ্ধের সিনেমায় নারীদের কণ্ঠস্বর খুব একটা উঠে আসে না। সারা পৃথিবীতে যুদ্ধক্ষেত্রে নারীদের সংগ্রাম থাকে, কিন্তু স্বীকৃতি মেলে না। এই সিনেমার মাধ্যমে সেই নীরব কণ্ঠগুলোকে স্বীকৃতি দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

সিনেমাটিকে তিনি সারা পৃথিবীর যুদ্ধের প্রতিবিম্ব হিসেবে দেখেছেন।

চলচ্চিত্র নির্মাণে নীরবতার ব্যবহার

আকরাম খানের আগের দুটি চলচ্চিত্র, ‘ঘাসফুল’‘খাঁচা’, সংলাপের বাহুল্য থেকে মুক্ত। তাঁর নির্মাণশৈলীতে নীরবতা একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য। তিনি বলেন,

‘অনেক সংলাপ দিয়ে গল্প বলে দেওয়ার চেয়ে ইঙ্গিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে পছন্দ করি। তাই আমার সিনেমায় নীরবতা বেশি থাকে। মুখের অভিব্যক্তি ছাড়াও হাত-পায়ের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করেছি।’

প্রধান চরিত্র ও অভিনয়

‘নকশীকাঁথার জমিন’-এ প্রধান চরিত্র রাহেলা। জয়া আহসান চরিত্রটিতে প্রাণ দিয়েছেন। সংলাপহীন এই চরিত্রে চোখের ভাষার মাধ্যমে আবেগ ফুটিয়ে তুলেছেন তিনি। জয়া বলেন,

‘চরিত্রটার চোখের পাতা খুব একটা পড়ে না। দুঃখ ভারাক্রান্ত থাকে, চরিত্রটাই সেভাবে নির্মাণ করা হয়েছে।’

রাহেলার বোন সালেহা চরিত্রে অভিনয় করেছেন সেঁওতি। দুই ভাইয়ের চরিত্রে আছেন ইরেশ যাকের ও রওনক হাসান। এছাড়া দিব্য জ্যোতি ও সৌম্য জ্যোতি দুই গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন।

লেখকের সঙ্গে নির্মাতার সম্পর্ক

আকরাম খান ও হাসান আজিজুল হকের দীর্ঘদিনের সখ্য। এর আগে হাসান আজিজুল হকের গল্প অবলম্বনে নির্মিত ‘খাঁচা’ দর্শকদের প্রশংসা পেয়েছিল।
‘নকশীকাঁথার জমিন’-এর কাজ শুরুর আগেই লেখকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছিলেন নির্মাতা। মহামারির সময় শুটিং শুরু হয়। তবে দৃশ্যধারণ শেষ হওয়ার আগেই ২০২১ সালের নভেম্বরে লেখক মারা যান। নির্মাতা বলেন,

‘উনি দেখে যেতে পারলেন না, এটা আমার কাছে দুঃখের, আফসোসের।’

মুক্তি ও প্রদর্শনী

গত বুধবার সন্ধ্যায় স্টার সিনেপ্লেক্সের সীমান্ত সম্ভার শাখায় ছবিটির প্রিমিয়ার শো অনুষ্ঠিত হয়।
আজ থেকে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্সের বসুন্ধরা সিটি, সীমান্ত সম্ভার, সনি স্কয়ার; চট্টগ্রামের বলি আর্কেড এবং কেরানীগঞ্জের লায়ন সিনেমাসে সিনেমাটি প্রদর্শিত হচ্ছে।

চূড়ান্ত মূল্যায়ন

আকরাম খানের ‘নকশীকাঁথার জমিন’ মুক্তিযুদ্ধের গল্পে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি একদিকে যেমন নারীর সংগ্রামের গল্প, তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার গভীরে প্রবেশ করার একটি প্রয়াস। সংলাপহীন নীরবতার মধ্য দিয়ে গল্প বলার নির্মাতার দক্ষতা, জয়া আহসানের অনবদ্য অভিনয়, এবং হাসান আজিজুল হকের গল্পের শক্তি—সব মিলে এই সিনেমা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হয়ে থাকবে।

Leave a Reply