২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চায় বিএনপি ও বিভিন্ন দল
অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থাহীনতা ক্রমেই বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে ভাষণে নির্বাচনের সময় সম্পর্কে একটি ধারণা দিলেও, এতে রাজনৈতিক দলগুলো সন্তুষ্ট হতে পারেনি। কারণ, নির্বাচনের সময় নির্ধারণে দলগুলোর সঙ্গে কোনো পূর্ব আলোচনার উদ্যোগ নেয়নি সরকার।
নির্বাচন ও রোডম্যাপ নিয়ে অস্পষ্টতা
বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, অন্তর্বর্তী সরকার এখনো নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ প্রকাশ করেনি। তাদের দাবি, দ্রুত আলোচনা করে নির্বাচন আয়োজনের জন্য একটি ঐকমত্যের ভিত্তিতে রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে।
- প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে।
- প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এটিকে ব্যাখ্যা করে বলেছেন, “আশা করতে পারেন যে নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে হবে।”
তবে বিরোধী দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি মনে করছে, নির্বাচনের জন্য এত দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন নেই।
বিএনপির অবস্থান
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, দলটি সরকারের প্রতি শুরু থেকেই সমর্থন দিয়ে আসছে। তবে নির্বাচনের বিষয়ে আলোচনা ছাড়া সময় ঘোষণা করা সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে।
- বিএনপির দাবি, ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন করা সম্ভব।
- দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, অর্থনৈতিক স্থবিরতা, এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকে সামনে রেখে দ্রুত নির্বাচনের দাবি তুলেছে দলটি।
- বিএনপির মতে, নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, সংকট তত বাড়বে।
জামায়াত ও অন্যান্য দলের অবস্থান
জামায়াতে ইসলামীর অবস্থানেও সাম্প্রতিক সময়ে পরিবর্তন এসেছে।
- দলটি আগে সব সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের দাবি করলেও, এখন ২০২৫ সালের মধ্যেই নির্বাচন চাচ্ছে।
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এবং গণ অধিকার পরিষদের মতো দলগুলো প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের পক্ষে।
রাজনৈতিক সংকট ও আস্থার ঘাটতি
বিএনপি ও এর মিত্ররা সরকারের কিছু কর্মকাণ্ডকে বিরাজনীতিকরণের কৌশল হিসেবে দেখছে।
- সরকার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কি না, এমন সন্দেহ রয়েছে বিএনপির মধ্যে।
- গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক এবং বিএনপির অন্য নেতারা মনে করেন, নতুন দলগুলোর জায়গা করে দিতে নির্বাচন বিলম্বিত করা হতে পারে।
সংস্কার ও নির্বাচনের বিতর্ক
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচন আগে হবে, নাকি সংস্কার আগে হবে, তা নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে।
- ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও গণ অধিকার পরিষদের মতো দলগুলো সংস্কার শেষ করে নির্বাচনের পক্ষে।
- বিএনপি ও জামায়াত দ্রুত নির্বাচন চায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার নির্বাচনের পরেও করা সম্ভব বলে মনে করে।
আলোচনার প্রয়োজনীয়তা
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, “আলোচনা করে ঐকমত্যের ভিত্তিতে রোডম্যাপ তৈরি করলে প্রশ্ন তোলার সুযোগ থাকবে না।”
সরকারের ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ছয়টি সংস্কার কমিশন তাদের প্রস্তাব জমা দেবে। এরপর রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হতে পারে।
সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা দূর করতে নিয়মিত আলোচনার বিকল্প নেই। নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ তৈরি এবং দলগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করাই এই সংকট সমাধানের একমাত্র পথ।