দ্রুত নির্বাচনের লড়াইয়ে একা বিএনপি
দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য বিএনপি একাই সক্রিয় লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটানো ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া অন্যান্য দল এবং গোষ্ঠীর অগ্রাধিকারে রয়েছে সংস্কার এবং গণহত্যার বিচার। তবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্ভাব্য নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করলেও বিএনপি তা নিয়ে অস্পষ্টতার অভিযোগ তুলেছে।
বিএনপির অবস্থান ও যুক্তি
বিএনপি নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের দাবি জানালেও সময়সীমা নির্ধারণ করেনি। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, “আমরা রাজনীতি করি, তাই ভোটের কথা বলব।” বিএনপি মনে করে, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচনী পরিসংখ্যান তাদের পক্ষে থাকায় দ্রুত নির্বাচন তাদের জন্য সুবিধাজনক।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “নির্বাচন কমিশন গঠন হয়ে গেছে, তবে নির্বাচনের প্রস্তুতির অভাব দেখা যাচ্ছে।” দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ড. ইউনূসের দেওয়া বক্তব্যকে অস্পষ্ট উল্লেখ করে দ্রুত ভোট আয়োজনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে।
অন্য দলগুলোর অবস্থান
- জামায়াতে ইসলামী: দলটি নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে। তাদের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেছেন, “সংস্কার শেষ করার পরই নির্বাচন হওয়া উচিত। তাড়াহুড়ো করার দরকার নেই।”
- ছাত্র নেতৃত্ব: অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্র নেতারা জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের বিচারের আগে নির্বাচন হতে দেবে না।
- ইসলামী আন্দোলন ও অন্যান্য ধর্মভিত্তিক দল: সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিলেও তাদের নির্বাচনী সাফল্য বরাবরই সীমিত।
- জাতীয় পার্টি (জাপা): গত চারটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নেওয়ার পর, দলটির ভোট কমেছে এবং জয়ের সম্ভাবনা সীমিত।
অন্তর্বর্তী সরকারের ভূমিকা
ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের শেষ থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হতে পারে। তবে বিএনপি মনে করে, এই সময়সীমা নিয়ে অস্পষ্টতা এবং পরস্পরবিরোধী বক্তব্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে।
বিএনপির আশঙ্কা ও লক্ষ্য
বিএনপির নেতারা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় থাকলে অর্থনীতি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির দায় বর্তমান সরকারের ওপর চাপানো কঠিন হয়ে পড়তে পারে। একই সঙ্গে দলটি মনে করছে, দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে তারা একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে সক্ষম হবে।
বিএনপির লক্ষ্য দ্রুত নির্বাচনের আয়োজন হলেও অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে বিভাজন দেখা যাচ্ছে। সংস্কার এবং বিচারের দাবি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান ভিন্ন। এ অবস্থায়, দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।