December 22, 2024
‘চোখ ফেরাতে’ কিডনি রোগীর নাটক সাজায় ডাকাতেরা

‘চোখ ফেরাতে’ কিডনি রোগীর নাটক সাজায় ডাকাতেরা

ডিসে ২০, ২০২৪

দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংক ডাকাতির চেষ্টার বিস্তারিত

ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় বৃহস্পতিবার ঘটে যাওয়া ডাকাতির চেষ্টা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। ব্যাংক ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন ব্যক্তি প্রথমে দাবি করেন, তারা কিডনি রোগীর চিকিৎসার জন্য অর্থ সংগ্রহ করতে ডাকাতি করতে এসেছিলেন। তবে পরে তদন্তে জানা যায়, তাদের এই বক্তব্য মিথ্যা এবং উদ্দেশ্য ছিল কেবল অর্থ লুট করা।

পরিকল্পনার পেছনের কাহিনি

পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে, ডাকাতির মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন লিয়ন মোল্লা ওরফে নিরব। তিনি মাসখানেক ধরে এই ছক কষেন এবং ব্যাংকের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। ডাকাতি কাজে সহযোগিতা করার জন্য তিনি দুই কিশোরকে যুক্ত করেন এবং তাদের প্রলোভন দেখান আইফোন ও মোটরসাইকেল কেনার।

নিরব গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার বাসিন্দা, পেশায় গাড়িচালক। অন্যদিকে, তার সহযোগী দুই কিশোর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বাসিন্দা। তাদের একজন সপ্তম শ্রেণির স্কুল শিক্ষার্থী এবং অন্যজন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী।

ঘটনাস্থলে কী ঘটেছিল

ডাকাতির দিন দুপুর ২টার দিকে তিনজন মুখে মাস্ক ও চশমা পরে ব্যাংকে প্রবেশ করেন। তারা একটি তালা দিয়ে ব্যাংকের প্রধান দরজা বন্ধ করে দেন এবং সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এরপর পিস্তল সদৃশ বস্তু দিয়ে ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীদের ভয় দেখিয়ে মেঝেতে বসিয়ে রাখেন।

ব্যাংকের ভেতরে থাকা ১৮ জন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও গ্রাহককে জোর করে একত্রিত করে মাথা নিচু করে বসতে বাধ্য করেন। এক ডাকাত টাকার ব্যাগ ভর্তি করতে ব্যস্ত ছিলেন, অন্য দুইজন সবাইকে পাহারা দিচ্ছিলেন।

পালানোর চেষ্টা ও ব্যর্থতা

ডাকাতরা বাইরে জনতার ভিড় টের পেয়ে পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। ব্যাংকের পেছনের লোহার গ্রিল ভাঙার চেষ্টা করেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। পরে ব্যাংকের প্রধান দরজা দিয়ে বের হতে চাইলেও সেখানে জনতার উপস্থিতি দেখে তারা আরও চাপে পড়েন। এ সময় স্থানীয় জনতা ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় তারা আটক হন।

আইনি প্রক্রিয়া

ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুনাইদ গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে লিয়ন মোল্লার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। অন্যদিকে, দুই কিশোরের দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য

ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ সাঈদ বলেন, “তারা চলচ্চিত্র বা ভিডিও গেমস দেখে প্রভাবিত হয়ে এ কাজ ঘটিয়েছে। ডাকাতি করে তারা কিডনি রোগীকে সাহায্য করার যে গল্প সাজিয়েছিল, তা সম্পূর্ণ ভুয়া।”

ব্যাংকের গ্রাহক বাবুল খান বলেন, “তারা সবার মোবাইল নিয়ে নেয় এবং কল এলে নিজেরাই রিসিভ করছিল।”

এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, অপরাধীরা কিশোরদের কাজে লাগিয়ে অপরাধ সংঘটনের চেষ্টা করেছিল। ব্যাংক ও জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমন অপরাধ ঠেকাতে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন।

Leave a Reply