রাষ্ট্রপতির মহান বিজয় দিবসের বাণী: স্বাধীনতা, উন্নয়ন ও ঐক্যের আহ্বান
আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন জাতির উদ্দেশে এক বিশেষ বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে।”
রাষ্ট্রপতি বাণীতে দেশ ও প্রবাসের সকল বাংলাদেশিকে বিজয়ের শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “বিজয়ের এই দিনে আমরা পেয়েছি একটি সার্বভৌম দেশ, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও লাল-সবুজ পতাকা। পেয়েছি বিশ্বে আমাদের স্বাধীন অস্তিত্বের মর্যাদা।”
শহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা
রাষ্ট্রপতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী শহীদদের, জাতীয় নেতাদের, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের, সম্ভ্রমহারা মা-বোনদের এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও সমর্থকদের। তিনি বলেন, “জাতি তাঁদের অবদান চিরদিন কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে।”
স্বাধীনতার ইতিহাস ও চেতনা
রাষ্ট্রপতি বলেন, “স্বাধীনতা বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘ শোষণ-বঞ্চনা, রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের করুণ ইতিহাস। ৫২-এর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই যাত্রা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে পূর্ণতা পায় এবং ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।”
গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক মুক্তির আহ্বান
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, “আমাদের মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক স্বাধীনতার পাশাপাশি অর্থনৈতিক মুক্তি। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠনের মাধ্যমে সেই সংগ্রামের শুরু হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ দশক পরেও জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি পুরোপুরি অর্জিত হয়নি। বারবার গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হলেও বাংলাদেশ থেমে থাকেনি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থসামাজিক উন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে।”
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনা
রাষ্ট্রপতি ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনাকে ধারণ করে একটি বৈষম্যমুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমতসহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। একসঙ্গে কাজ করলে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আরও শক্তিশালী ও সম্মানিত জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে।”
বিশ্বশান্তি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, “বাংলাদেশ বিশ্বশান্তিতে বিশ্বাসী। আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান সম্ভব। ইসরায়েলের ফিলিস্তিন ও লেবাননে নিরীহ মানুষের ওপর হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশ সবসময় ফিলিস্তিনের ন্যায্য অধিকারের পক্ষে থাকবে। এছাড়া রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর ভূমিকা আশা করি।”
প্রবাসীদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা
রাষ্ট্রপতি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের অবদানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, “প্রবাসীরা রেমিট্যান্সের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বর্তমান বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতেও তাদের এ অবদান অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি।”
উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশের প্রত্যাশা
মহান বিজয় দিবসের প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্রপতির প্রত্যাশা, “আমরা সবাই মিলে বৈষম্যহীন, শোষণমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ এক নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ করব। এ জাতি বিশ্বে স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত হবে— ইনশা আল্লাহ।”
এই বিজয়ের দিনে রাষ্ট্রপতির আহ্বান সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কাজ করে যাওয়ার।