জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা
সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে আজ সকাল ৭টা ১২ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকায় সফররত তিমুর লেস্তের প্রেসিডেন্ট জোসে রামোস হোর্তা। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে তারা নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত একটি চৌকস দল রাষ্ট্রীয় অভিবাদন জানায় এবং বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। পরে প্রধান উপদেষ্টা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে রাখা দর্শনার্থী বইয়ে স্বাক্ষর করেন।
বিজয়ের ইতিহাস ও জাতীয় গর্ব
আজ ১৬ ডিসেম্বর, বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস। এটি বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য-বীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বাংলাদেশ নামের স্বাধীন ভূখণ্ড পৃথিবীর মানচিত্রে আত্মপ্রকাশ করে।
প্রথম বিজয় দিবস উদযাপন: অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্বে
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর এটাই প্রথম বিজয় দিবস। এ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে পৃথক বাণী দেন। তারা মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
জাতীয় পর্যায়ে কর্মসূচি
- ভোরের সূচনা: ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটি শুরু হয়।
- স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা: রাষ্ট্রপতি এবং প্রধান উপদেষ্টা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
- বিভিন্ন আয়োজন: সারা দেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর উদ্যোগে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।
- বিশেষ আয়োজন: এতিমখানা, বৃদ্ধাশ্রম, হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিশেষ খাবার পরিবেশন এবং শিশু পার্ক ও জাদুঘর বিনা টিকিটে উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের কর্মসূচি
- বিএনপি: দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন, সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং শেরেবাংলা নগরে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য প্রদান। ‘সবার আগে বাংলাদেশ’-এর উদ্যোগে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে সর্বজনীন কনসার্ট।
- জামায়াতে ইসলামী: উত্তরার জমজম টাওয়ার এবং বিজয়নগর থেকে বিজয় র্যালি।
- অন্যান্য দল: গণতন্ত্র মঞ্চ, বাম গণতান্ত্রিক জোট, বিকল্পধারা, সিপিবি, বাসদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।
যানবাহন চলাচলে নির্দেশনা
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবন ও এর আশপাশে বিকল্প সড়ক ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ। দুপুর ১২টা থেকে অনুষ্ঠান শেষ না হওয়া পর্যন্ত গুলিস্তান আহাদ বক্স, ইত্তেফাক মোড়, এবং পার্ক রোড এলাকায় যানবাহন চলাচল সীমিত থাকবে। বিকল্প পথ ব্যবহারের অনুরোধ করা হয়েছে।
বিজয় দিবসের তাৎপর্য
বিজয় দিবস জাতির ঐক্য, গৌরব, এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত সাফল্যের প্রতীক। আজকের দিনটি দেশের প্রতিটি প্রান্তে আনন্দ এবং গর্বের সাথে উদযাপিত হচ্ছে।