কিংবদন্তি তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আর নেই
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বিশ্বখ্যাত তবলাবাদক ওস্তাদ জাকির হোসেন আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৩ বছর। তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছে তার পরিবার। তিনি দীর্ঘদিন ধরে রক্তচাপ ও ফুসফুসজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন।
শেষ মুহূর্তের লড়াই
জাকির হোসেন সান ফ্রান্সিসকোর আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন। তার ব্যবস্থাপক নির্মলা বাচানী জানিয়েছেন, দুই সপ্তাহ আগে শ্বাসকষ্টজনিত কারণে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটায় তাকে নিবিড় পরিচর্যায় রাখা হয়েছিল।
কিংবদন্তির জীবন ও কর্ম
১৯৫১ সালে মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণকারী ওস্তাদ জাকির হোসেন ছিলেন ভারতের ধ্রুপদি সংগীত জগতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। কিংবদন্তি তবলাবাদক আল্লারাখার পুত্র জাকির মাত্র ৩ বছর বয়সে তবলা শেখা শুরু করেন। ১২ বছর বয়সে বাবার সঙ্গে মঞ্চে প্রথম পারফর্ম করেন, যা তাকে সংগীত জগতে দ্রুত পরিচিতি এনে দেয়।
আন্তর্জাতিক খ্যাতি
১৯৭০ সালে জাকির হোসেন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং সেখানে তার সংগীতজীবনের আন্তর্জাতিক অধ্যায় শুরু হয়। ১৯৭৩ সালে জর্জ হ্যারিসনের Living in the Material World অ্যালবামে অংশগ্রহণ তার খ্যাতিকে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেয়। এরপর তিনি জন ম্যাকলাফলিন, মিকি হার্ট, বিল ল্যাসওয়েল, এবং ভ্যান মরিসনের মতো বিশ্বখ্যাত শিল্পীদের সঙ্গে কাজ করেন।
ধ্রুপদি সংগীতে অবদান
ভারতীয় ধ্রুপদি সংগীতে জাকির হোসেনের অবদান অবিস্মরণীয়। পণ্ডিত রবিশঙ্কর, ওস্তাদ আলী আকবর খাঁ, শিবকুমার শর্মা এবং বিরজু মহারাজের মতো সংগীত ও নৃত্যগুরুদের সঙ্গে তবলায় সঙ্গত করেছেন তিনি।
প্রতিষ্ঠা ও সম্মাননা
১৯৯২ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘মোমেন্ট রেকর্ড’, যা ধ্রুপদি সংগীতের পাশাপাশি সমকালীন বিশ্বসংগীতকেও এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। তার সংগীত অ্যালবাম Golden Strings of the Sarod ২০০৬ সালে গ্র্যামি পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়। জীবদ্দশায় তিনি পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, এবং গ্র্যামিসহ অসংখ্য সম্মাননা অর্জন করেছেন।
বিশেষ সংযোগ: কনসার্ট ফর বাংলাদেশ
মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’-এর অন্যতম সদস্য ছিলেন তার বাবা আল্লারাখা খান। সেই ঐতিহাসিক সংযোগও জাকির হোসেনকে বাংলাদেশের মানুষের কাছে প্রিয় করে তুলেছে।
বিশ্বসংগীতের অপূরণীয় ক্ষতি
জাকির হোসেনের মৃত্যুতে সংগীতজগৎ একজন অনন্য শিল্পীকে হারালো। তার বাদ্যশৈলী পূর্ব ও পশ্চিমের সংগীতজগতকে এক সুতোয় বাঁধতে সহায়তা করেছে। সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়ে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
শান্তি ও সঙ্গীতে অনুপ্রাণিত এই মহান শিল্পীর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।