বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকাণ্ড নিয়ে কমিশন গঠন হচ্ছে না
ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি সংঘটিত বিডিআর (বর্তমানে বিজিবি) বিদ্রোহের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড নিয়ে আপাতত কোনো কমিশন গঠন করা হচ্ছে না। সরকার এই মুহূর্তে কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। রোববার হাইকোর্ট বেঞ্চে রাষ্ট্রপক্ষ এ তথ্য জানিয়েছে।
হাইকোর্টে রাষ্ট্রপক্ষের বক্তব্য
আজ সকালে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চকে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তানিম খান জানান, বিডিআর হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুইটি মামলা বিচারাধীন থাকায় আপাতত কমিশন গঠনের কোনো পরিকল্পনা নেই।
এর আগে ২ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টকে জানায়, তারা কমিশন গঠন করছে। তবে দুপুরে সেই বক্তব্য থেকে সরে আসে।
বিদ্রোহের ঘটনা ও মামলার প্রেক্ষাপট
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। বিদ্রোহের পর দুইটি মামলা দায়ের করা হয়:
- হত্যা মামলা:
- প্রথমে লালবাগ থানায় দায়ের করা হয় এবং পরে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়।
- সিআইডি তদন্ত শেষে ২৩ জন বেসামরিক ব্যক্তিসহ ৮২৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
- পরবর্তীতে আরও ২৬ জনকে অভিযুক্ত করে মোট ৮৩৪ জনের বিরুদ্ধে সম্পূরক অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়।
- বিস্ফোরক মামলা:
- সিআইডি এই মামলায় ৮০৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে।
বিচার চলাকালে কয়েকজন আসামির মৃত্যু হয়। এর মধ্যে রয়েছেন বিডিআরের তৎকালীন ডিএডি রহিম।
বিদ্রোহ পরবর্তী পরিবর্তন
বিদ্রোহের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) রাখা হয়। বিদ্রোহে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীকে দণ্ড দেওয়া হয়। সাজা ভোগকালীন পিন্টু কারাগারে অসুস্থ হয়ে মৃত্যুবরণ করেন।
কমিশন গঠনের প্রস্তাব ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুরুতে বিডিআর হত্যার ঘটনা পুনরায় তদন্তে কমিশন গঠনের কথা বললেও, সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে তা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় কমিশন গঠনের বিষয়টি উপযুক্ত নয়।
বিডিআর বিদ্রোহ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক বেদনাদায়ক অধ্যায়। এ ঘটনার বিচারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। তবে কমিশন গঠন স্থগিত রাখার সরকারের সিদ্ধান্ত মামলার বিচার প্রক্রিয়ার সমাপ্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বলে উল্লেখ করা হয়েছে।