পেনশনভোগীসহ সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পাবেন মহার্ঘ ভাতা
সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী এবং বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যথাযথ বলে প্রতীয়মান। এ সিদ্ধান্তের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক এবং এর প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করা যাক:
মহার্ঘ ভাতার প্রয়োজনীয়তা ও প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যস্ফীতি উচ্চমাত্রায় বিরাজ করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন অনুযায়ী, সম্প্রতি খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১৩.৮০% এবং খাদ্যবহির্ভূত ক্ষেত্রে ৯.৩৯% হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য জীবনযাপন কঠিন হয়ে উঠেছে।
পাঁচ বছর পরপর নতুন বেতন কাঠামো প্রবর্তনের রীতি থাকলেও, ২০১৫ সালের পর থেকে নতুন পে স্কেল ঘোষণা হয়নি। যদিও বার্ষিক ৫% ইনক্রিমেন্ট চালু রয়েছে, তা মূল্যস্ফীতির চাপ সামাল দেওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়।
মহার্ঘ ভাতা প্রদানের উদ্যোগ
সরকারি কর্মচারীদের সাম্প্রতিক দাবির প্রেক্ষিতে এবং অর্থনৈতিক সংকট বিবেচনায়, সরকার মহার্ঘ ভাতা প্রদানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ভাতা মূল্যস্ফীতির কারণে সৃষ্ট চাপ কিছুটা লাঘব করবে।
মুখ্য বৈশিষ্ট্য:
- সব শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীর অন্তর্ভুক্তি: সচিব থেকে পিয়ন পর্যন্ত সবাই ভাতা পাবেন।
- বিশেষ কমিটির গঠন: অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের নির্দেশনায় সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়েছে। কমিটি মহার্ঘ ভাতার হার নির্ধারণ এবং এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করবে।
- অস্থায়ী প্রকৃতি: মহার্ঘ ভাতা মূল বেতনের সঙ্গে যুক্ত হবে না, ফলে অন্যান্য ভাতার হিসাব অপরিবর্তিত থাকবে।
- বাজেট সমন্বয়: মহার্ঘ ভাতার জন্য বাজেটে বরাদ্দ না থাকায় পরিচালন বাজেটের অন্য খাত থেকে সমন্বয় করা হবে।
মহার্ঘ ভাতার সম্ভাব্য প্রভাব
- জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন:
মহার্ঘ ভাতা সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। মূল্যস্ফীতির চাপ কিছুটা কমবে, বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যস্তরের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে। - সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে সন্তুষ্টি:
দীর্ঘদিন ধরে নতুন পে স্কেলের দাবি পূরণ না হওয়ায় অসন্তোষ বিরাজ করছিল। মহার্ঘ ভাতার মাধ্যমে এ অসন্তোষ অনেকাংশে নিরসন হবে। - অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা:
নতুন পে স্কেল প্রবর্তনের তুলনায় মহার্ঘ ভাতা কম খরচে কার্যকরী সমাধান হতে পারে। - রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা:
সরকারি চাকরিজীবীদের অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান সরকারের প্রতি জনসমর্থন বাড়াতে সহায়ক হবে।
সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ
- অস্থায়ী সমাধান:
মহার্ঘ ভাতা মূল সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়। নতুন পে স্কেলের অভাবে কর্মচারীদের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হতে পারে। - বাজেট সংকট:
মহার্ঘ ভাতার জন্য বরাদ্দ বাজেটের অন্যান্য খাত থেকে সমন্বয় করা হবে। এতে অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। - বিভাজন ও বৈষম্য:
মহার্ঘ ভাতার হার নির্ধারণে যদি স্পষ্ট নীতিমালা না থাকে, তবে কর্মচারীদের মধ্যে বিভাজন ও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
মহার্ঘ ভাতা প্রদানের উদ্যোগ সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং তাদের মধ্যে সন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। তবে এটি একটি অস্থায়ী সমাধান। ভবিষ্যতে দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নতুন বেতন কাঠামো প্রবর্তন জরুরি।
সরকারকে মহার্ঘ ভাতা বাস্তবায়নের পাশাপাশি সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে, যাতে উন্নয়ন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।