December 22, 2024
গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন, র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ

গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা পেয়েছে কমিশন, র‍্যাব বিলুপ্তির সুপারিশ

ডিসে ১৫, ২০২৪

গুমের ঘটনা নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিশনের অন্তর্বর্তী প্রতিবেদনে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করলে বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, প্রশাসনিক কাঠামো, এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রমের ওপর একটি গভীর সংকটের চিত্র ফুটে ওঠে। এই সংকট দেশের ন্যায্যতা ও জবাবদিহিতার কাঠামোতে বড় ধরনের ফাঁক তৈরি করেছে।

১. সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুমের ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পৃক্ততা কমিশন শনাক্ত করেছে। একজন সাবেক শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার এমন গুরুতর অভিযোগে জড়ানো দেশের শাসনব্যবস্থা এবং মানবাধিকার রক্ষার অঙ্গীকারের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে। এই অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত এবং বিচার না হলে এটি দেশি-বিদেশি পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

২. প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ভূমিকা

প্রতিবেদনে হাসিনা প্রশাসনের বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার তথ্য উঠে এসেছে। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন:

  • মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক (প্রতিরক্ষাবিষয়ক উপদেষ্টা)
  • মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান (সাবেক এনটিএমসি প্রধান)
  • পুলিশ কর্মকর্তা মো. মনিরুল ইসলাম এবং মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ

তাদের ভূমিকা স্পষ্টতই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের দিকে ইঙ্গিত করে। গুমের ঘটনা যেন স্বাভাবিক ও নজরদারির বাইরে থাকে, সে উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাহিনীর মধ্যে ভিকটিমদের বিনিময় এবং ভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি একটি সুসংগঠিত ষড়যন্ত্রকে নির্দেশ করে।

৩. গুমের প্রকৃতি ও ভুক্তভোগীদের পরিস্থিতি

প্রতিবেদনে উঠে এসেছে গুম হওয়া ব্যক্তিদের ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক নির্যাতনের বিবরণ। ট্রমা এবং শঙ্কায় ভুক্তভোগীরা এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। তাদের ওপর এমন অত্যাচার চালানো হয়েছে, যা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন।

৪. কমিশনের সুপারিশ

কমিশন প্রাথমিক প্রতিবেদনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ দিয়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য:

  • গুমের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করা।
  • র‍্যাব বিলুপ্তি।
  • গোপন বন্দিশালা, বিশেষত ‘আয়নাঘর’, পরিদর্শনের মাধ্যমে প্রমাণ সংগ্রহ।

এই সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে হলে সরকারকে একটি কঠিন নৈতিক এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

৫. ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকা

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গুমের ঘটনায় যথাযথ বিচার প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আয়নাঘর পরিদর্শনের জন্য কমিশনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে তিনি ভিকটিমদের আস্থার জায়গা তৈরিতে একটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারেন।

৬. ভবিষ্যৎ প্রেক্ষাপট

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে কমিশনকে আরও এক বছর সময় প্রয়োজন। যদি সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়, তাহলে এই সময়ের মধ্যে প্রকৃত সত্য উদঘাটনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিচার প্রক্রিয়া এবং প্রশাসনিক সংস্কার কার্যকর না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে।

এই প্রতিবেদন বাংলাদেশের প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সংস্কৃতির একটি অন্ধকার দিক উন্মোচন করেছে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তা রাষ্ট্রীয় নৈতিকতা ও আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য একটি বড় হুমকি। সরকারের উচিত এই পরিস্থিতিকে অগ্রাধিকার দিয়ে সমাধান করা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, যাতে ভবিষ্যতে এমন মানবাধিকার লঙ্ঘনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।

Leave a Reply