আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় শ্রম অসন্তোষ: পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্ল্যাটফর্ম গঠন সিদ্ধান্ত
ঢাকার আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে শ্রম অসন্তোষ ক্রমশ বাড়ছে। শনিবার মালিক পক্ষের বৈঠকে শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বৈঠকের বিবরণ
শনিবার রাজধানীর উত্তরা বিজিএমইএ কার্যালয়ে আয়োজিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের প্রশাসক আনোয়ার হোসেন। বৈঠকে আশুলিয়া অঞ্চলের ৩১ জন কারখানা মালিক উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মালিকরা শ্রম অসন্তোষের কারণ বিশ্লেষণ এবং তা নিরসনের উপায় নিয়ে আলোচনা করেন।
বিজিএমইএ’র সহায়ক কমিটির সদস্য এনামুল হক খান বাবলু জানান:
- আশুলিয়ায় বারবার শ্রম অসন্তোষের কারণ খুঁজতে একটি বিশেষ প্ল্যাটফর্ম গঠন করা হবে।
- তুলনামূলকভাবে ভালো সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও কেন সমস্যাগুলো সৃষ্টি হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখা হবে।
শ্রম অসন্তোষ ও পুলিশের ভূমিকা
শনিবার আশুলিয়ার কয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতি পালন করেন। কিছু কারখানায় অরাজকতা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।
- ভাঙচুর ও আটক:
- চীনা মালিকানাধীন ডংলিয়ন ফ্যাশন লিমিটেড এবং গিল্ডেন অ্যাক্টিভওয়্যার বাংলাদেশ লিমিটেড কারখানায় ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা।
- শিল্প পুলিশ দুই শ্রমিককে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির অভিযোগে আটক করেছে।
- কর্মবিরতি ও ছুটি:
- স্টারলিং ক্রিয়েশন লিমিটেড, ক্রসওয়্যার লিমিটেড, আইডিএস, এইচ আর টেক্সটাইল, এবং ফ্যাশন ফোরামের শ্রমিকরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখেন।
- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চারটি কারখানায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
- শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারা অনুযায়ী ‘নো ওয়ার্ক, নো পে’ নীতি কার্যকর রয়েছে।
শ্রমিকদের দাবিসমূহ
- মূলত মূল্যস্ফীতি এবং নিত্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে শ্রমিকরা জীবনযাত্রার চাপ অনুভব করছেন।
- তারা বার্ষিক বেতন ১৫ শতাংশ বৃদ্ধিসহ ১৮ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন।
মালিকপক্ষের অভিযোগ
মালিকপক্ষ মনে করছে, পোশাক খাতে হঠাৎ করে অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে দেশি-বিদেশি ইন্ধন ও চক্রান্ত থাকতে পারে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি
আশুলিয়া শিল্পাঞ্চল পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া জানান:
- শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
- পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী, র্যাব, বিজিবি ও এপিবিএন সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
- পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।
পোশাক শিল্প বাংলাদেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। এ শিল্পের স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে শ্রমিক-মালিক উভয়ের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি টেকসই সমাধান প্রয়োজন। একই সঙ্গে শ্রমিক অসন্তোষের প্রকৃত কারণ চিহ্নিত করে তা সমাধান করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে হবে।