সিরিয়ার ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের রহস্যময় পলায়ন: রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়ে জল্পনা
সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে বিদ্রোহীদের কাছে পরাজিত হয়ে রাশিয়ায় আশ্রয় নিয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ এবং তার পরিবার। ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তার পলায়নের ঘটনা এবং শেষ মুহূর্তের পরিকল্পনার নানা দিক।
পরিকল্পনার গোপনীয়তা ও প্রতারণা
আসাদের দেশত্যাগের পরিকল্পনা ছিল অত্যন্ত গোপন। রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলা ১৪ জন বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, আসাদ তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী, সামরিক কর্মকর্তা এবং আত্মীয়দেরও এ ব্যাপারে কিছু জানাননি। বিদ্রোহীদের হাতে দামেস্ক দখলের হুমকির মুখে গত শনিবার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন আসাদ। তিনি তখন দাবি করেন, রুশ সামরিক সহায়তা আসছে এবং স্থলবাহিনীকে প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
কিন্তু বৈঠকের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই খবর আসে, আসাদ দেশ ছেড়ে সপরিবারে পালিয়েছেন। তার পলায়নের বিষয়টি সহকর্মী ও অনুগত সেনাদের জন্য ছিল বড় ধাক্কা।
পলায়নের পথ ও রাশিয়ায় আশ্রয়
আসাদের ফ্লাইটটি রাডারের বাইরে পরিচালিত হয়েছিল, যা বিদ্রোহীদের নজর এড়িয়ে তাকে রাশিয়ায় পৌঁছে দেয়। বর্তমানে আসাদ ও তার পরিবার মস্কোতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছেন। রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ জানিয়েছেন, আসাদ রাশিয়ায় নিরাপদে আছেন। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তিনি প্রকাশ করেননি।
রাশিয়ার অবস্থান
ক্রেমলিন জানায়, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আসাদকে আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে আসাদের পতন রাশিয়া ও ইরানের জন্য বড় ধাক্কা। পশ্চিমা দেশগুলোর চাপ উপেক্ষা করে মস্কো ও তেহরান আসাদের শাসন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল।
বিশ্লেষণ ও প্রতিক্রিয়া
আরব রিফর্ম ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক নদিম হুরি বলেন, আসাদ তার সেনাবাহিনী ও অনুগতদের ভাগ্যের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। এটি তার নেতৃত্বের ব্যর্থতার পরিচায়ক। দীর্ঘ ১৩ বছরের গৃহযুদ্ধে এভাবে তার পতন রাশিয়া ও ইরানের জন্য এক বড় পরাজয়ের চিত্র তুলে ধরেছে।আসাদের পলায়ন এবং রাশিয়ায় আশ্রয় নেওয়া মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি ও গৃহযুদ্ধের নতুন অধ্যায় উন্মোচন করেছে। তার এ সিদ্ধান্ত যেমন একদিকে বিদ্রোহীদের বিজয়ের বার্তা দেয়, তেমনই অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে রাশিয়ার ভূমিকা ও আগ্রহকে নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সিরিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা নিয়ে অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হলো।