December 22, 2024
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংগ্রামের ‘ধারাবাহিকতা’ ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সংগ্রামের ‘ধারাবাহিকতা’ ছিল জুলাই গণঅভ্যুত্থান

ডিসে ১৪, ২০২৪

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্য শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আদর্শ এবং সমকালীন রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে একটি সংযোগ স্থাপন করেছে। তিনি শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগ এবং তাদের স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানকে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তার মতে, তরুণদের আত্মত্যাগের ফলে রাষ্ট্র গঠনের যে দ্বিতীয় সুযোগ এসেছে, তা যেন ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে নষ্ট না হয়।

এটি একটি তাৎপর্যপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, কারণ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের প্রধান লক্ষ্য ছিল একটি স্বাধীন, গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। কিন্তু পরবর্তী সময়ে একদলীয় শাসন এবং রাজনৈতিক ব্যর্থতা সেই লক্ষ্য পূরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আসিফ নজরুলের মন্তব্য থেকে বোঝা যায়, এই ব্যর্থতার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে নতুন প্রজন্মের আত্মত্যাগ এবং সামাজিক আন্দোলনের ধারাবাহিকতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অন্তর্বর্তী সরকার ও শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন ও আদর্শকে ধারণ করে। এটি একটি সাহসী দাবি, তবে এই বক্তব্য বাস্তবে কতটুকু কার্যকর তা নির্ভর করে সরকারের নীতি ও কর্মপন্থার উপর। শহীদ বুদ্ধিজীবীরা একটি মুক্ত, ন্যায়সঙ্গত এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন। এই আদর্শ অনুসরণ করে একটি কার্যকর অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা সম্ভব হলে তা বাংলাদেশের জন্য একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের বার্তা বহন করবে।

১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিত হত্যা
ড. আসিফ নজরুলের বক্তব্যে ১৯৭১ সালের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের হত্যার উদ্দেশ্য এবং এর তাৎপর্য গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা বুদ্ধিজীবীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে জাতিকে মেধাশূন্য করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এ হত্যাকাণ্ড শুধু ব্যক্তিবিশেষের প্রতি আঘাত ছিল না; এটি ছিল পুরো জাতির ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাবনাকে ধ্বংস করার একটি সুপরিকল্পিত প্রচেষ্টা।

১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহিদের মধ্যে বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যার ঘটনা বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। এটি বোঝায় যে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি জানত, একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্ভর করে তার মেধা ও নেতৃত্বের উপর। তারা সেই নেতৃত্বকেই নির্মূল করার চেষ্টা করেছিল।

বর্তমান প্রেক্ষাপট ও দায়িত্ব
শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আত্মত্যাগের স্মরণে বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলোচনা সভা, উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা এবং মোনাজাতের আয়োজন একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ। তবে এই কার্যক্রম শুধুই আনুষ্ঠানিকতায় সীমাবদ্ধ থাকলে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব হবে না।

ড. আসিফ নজরুল এবং শফিকুল আলমের বক্তব্য থেকে একটি মূল বার্তা স্পষ্ট: শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্ন পূরণে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং সাধারণ জনগণ উভয়েরই দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা জরুরি। গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, মানবাধিকার, এবং বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের লক্ষ্যে তাদের ত্যাগকে পথপ্রদর্শক হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস কেবলমাত্র অতীতের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন নয়; এটি ভবিষ্যৎ গঠনের একটি অনুপ্রেরণা। স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ষড়যন্ত্র এবং পূর্ববর্তী ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সত্যিকারের গণতান্ত্রিক, ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়াই হবে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধার প্রকাশ।

Leave a Reply