দলীয় ছাত্ররাজনীতির ব্যানার সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) ‘গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী ছাত্ররাজনীতি প্রশ্ন: নয়া স্বরূপ অনুসন্ধানের অভিপ্রায়’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে ‘ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসি’। সভায় দলীয় ছাত্ররাজনীতির নেতিবাচক প্রভাব ও ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্য:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, দলীয় ছাত্র রাজনীতি জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।
- ইতিহাসের দিকে নজর দিয়ে তিনি বলেন:
- ১৯৪৮ ও ১৯৫২ সালে আওয়ামী লীগের কেউ ১৪৪ ধারা ভাঙেনি।
- একাত্তরে আওয়ামী লীগের ভূমিকা নিয়ে এখনও প্রশ্ন রয়েছে।
- ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানে দলীয় ছাত্ররাজনীতির নেতারা সবসময় সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন।
- ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রস্তাব:
- ছাত্ররাজনীতি হতে হবে শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষার রাজনীতি।
- নিয়মিত ছাত্রসংসদ নির্বাচন এবং মেধার ভিত্তিতে হলের সিট বণ্টনের ব্যবস্থা করতে হবে।
- ফ্যাসিবাদবিরোধী অবস্থানে সকল ছাত্র সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আখতার হোসেনের বক্তব্য:
ডাকসুর সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেন ছাত্ররাজনীতির সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেন:
- ছাত্ররাজনীতির বয়সসীমা নির্ধারণের প্রস্তাব:
- দীর্ঘসময় ছাত্ররাজনীতিতে যুক্ত থাকা নেতারা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখান।
- প্রশাসনের দায়:
- প্রশাসন ছাত্রলীগের নেতাদের অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
- ডাকসু নির্বাচন:
- ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচন হয়েছিল ২৮ বছর পর। এরপর ৫ বছর কেটে গেলেও নতুন কোনো নির্বাচন হয়নি।
- নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।
জাহিদুল ইসলামের প্রস্তাব:
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল জাহিদুল ইসলাম বলেন:
- ছাত্রশৃঙ্খলা বিধি চালুর প্রস্তাব:
- একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক কমিশনের মাধ্যমে ছাত্রশৃঙ্খলা বিধি প্রণয়ন এবং তা মানার প্রতিশ্রুতি নেওয়া উচিত।
- নারীর অংশগ্রহণ:
- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংগঠনে নারীর সংখ্যা ৫০ শতাংশ হলেও কমিটিতে নারীদের অংশগ্রহণ খুবই কম।
- নারীদের জন্য আলাদা প্ল্যাটফর্ম বা কমিটি গঠনের প্রস্তাব দেন তিনি।
মেঘমল্লার বসুর বক্তব্য:
বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মেঘমল্লার বসু ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধনের প্রস্তাব দেন:
- ডাকসুর সভাপতির ক্ষমতা কমানোর দাবি:
- সভাপতির একনায়কতান্ত্রিক ক্ষমতা বিলুপ্ত করতে হবে।
- ছাত্র সংসদের সভাপতি কোনোভাবেই একজন শিক্ষক বা অছাত্র হতে পারেন না।
- ডাকসুর কাঠামোতে পরিবর্তন:
- গঠনতন্ত্রে গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষার বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- প্রশাসনের কাছে হলের আবাসন দায়িত্ব ন্যস্ত করার প্রস্তাব দেন তিনি।
সভার সভাপতিত্ব ও অন্যান্য বক্তব্য:
ডায়ালগ ফর ডেমোক্রেসির আহ্বায়ক শেখ মো. আরমান সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনসহ অনেকে বক্তব্য দেন। তবে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন আমন্ত্রিত থাকলেও অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি।
এই আলোচনা সভার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতির সংস্কৃতির প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।