৫০ বছর ধরে করছাড় দিয়ে শিশু লালন করছি, আর কতকাল: অর্থ উপদেষ্টা
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়োজিত ভ্যাট দিবসের অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ব্যবসা-বাণিজ্যের বিভিন্ন খাতে দীর্ঘদিন ধরে চলা করছাড়ের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন,
“গত ৫০ বছর ধরে আমরা করছাড় দিয়ে শিশু লালনপালন করছি। তারা শারীরিকভাবে বড় হলেও এখনো সুরক্ষা দাবি করে। তবে সুরক্ষার দিন শেষ। আমাদের নিজেদের প্রতিযোগিতামূলক করতে হবে।”
অর্থ উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) কাতার থেকে উত্তীর্ণ হবে। তাই করছাড়ের সুবিধা থেকে বের হয়ে আসা জরুরি। তিনি কর কর্মকর্তাদের করদাতাদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন,
“জোর করে কর আদায় করবেন না, বরং সচেতনতার মাধ্যমে কর আহরণে জোর দিন।”
অনুষ্ঠানে বক্তাদের বক্তব্য
- এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান: কর প্রতিপালন না হলে কঠোর হতে হবে। করদাতাদের যেন কর কার্যালয়ে আসতে না হয়, এমন ব্যবস্থার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
- অর্থসচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার:
কর-জিডিপি অনুপাত না বাড়লে উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়ন কঠিন হবে। - ব্যবসায়ী নেতা ও এনবিআর কর্মকর্তারা:
রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি কমাতে কর ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশে কর-জিডিপি অনুপাতের সমস্যা
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বিশ্বের মধ্যে অন্যতম কম। বর্তমানে এটি ৮ শতাংশের নিচে, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট নয়।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী:
- সম্ভাব্য ভ্যাট আদায়: ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২.৮ লাখ কোটি টাকা।
- বাস্তব আদায়: মাত্র ৮৫ হাজার কোটি টাকা।
- ঘাটতি: প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা।
ভ্যাট অবকাশ ও করছাড়ের কারণে রাজস্ব আদায়ে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এনবিআর ভ্যাট ছাড়ের পরিমাণ ধীরে ধীরে কমানোর চেষ্টা করছে।
করছাড় ও অর্থনীতির ভবিষ্যৎ
বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়াতে এবং রাজস্ব আদায়ে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কর ব্যবস্থার সংস্কার ও করছাড় কমানোর গুরুত্ব বারবার উঠে এসেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, করছাড় কমানোর পাশাপাশি প্রযুক্তিভিত্তিক স্বচ্ছ কর ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে হবে।
দেশের কর ব্যবস্থায় দীর্ঘদিনের করছাড়ের সংস্কৃতি অর্থনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছে, তা মোকাবিলায় সরকারের কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। এলডিসি উত্তরণকে সামনে রেখে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ রাজস্ব কাঠামো গড়ে তুলতে হবে।