পুলিশের এক লাখের বেশি সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্যসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার তথ্য ফাঁস
দেশের সরকারি সংস্থা, ব্যাংক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংবেদনশীল তথ্য ফাঁসের ঘটনা ব্যাপক উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে পুলিশের এক লাখেরও বেশি সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্য, বিভিন্ন সংস্থার তথ্যভান্ডারে প্রবেশের আইডি ও পাসওয়ার্ড। এ তথ্যগুলো ডার্ক ওয়েব ও টেলিগ্রামের মাধ্যমে বিক্রির বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে।
ফাঁস হওয়া তথ্যের বিস্তারিত
ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য:
- পুলিশের তথ্যভান্ডার: পুলিশের ক্রাইম ডেটা ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিডিএমএস) থেকে অন্তত ৩১,৪১৫টি তথ্য ফাঁস হয়েছে। এতে মামলার তথ্যসহ বিপি নম্বর, পদমর্যাদা, ঠিকানা, ব্যক্তিগত ফোন নম্বর ও পরিবারের তথ্য রয়েছে।
- লগইন তথ্য: সরকারি বিভিন্ন সংস্থার ওয়েবসাইট ও তথ্যভান্ডারের ৪,৭১৭টি অ্যাডমিন প্যানেলের আইডি ও পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়েছে।
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য: বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই লাখেরও বেশি তথ্য ফাঁস হয়েছে, যার মধ্যে অ্যাডমিন প্যানেলের ২,২৬৮টি লগইন ডেটা রয়েছে।
- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বেশ কিছু ব্যাংকের তথ্যভান্ডারেও প্রবেশ করা সম্ভব বলে জানা গেছে।
পুলিশের তথ্য ফাঁসের প্রভাব
পুলিশের ফাঁস হওয়া তথ্যের মাধ্যমে সামান্য অর্থের বিনিময়ে ব্যক্তির নামে থাকা মামলার তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব। টেলিগ্রামের বিভিন্ন চ্যানেলে এসব তথ্য বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। জুলাই মাসে ফাঁস হওয়া তথ্যে অন্তত ১,০৮,৪১৬ পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত তথ্য পাওয়া গেছে।
তথ্য ফাঁসের কারণ
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার তৈরি ম্যালওয়্যারসহ বিভিন্ন ম্যালওয়্যার এসব ফাঁসের পেছনে দায়ী। পাইরেটেড সফটওয়্যার ও দুর্বল নিরাপত্তাব্যবস্থা এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে।
তথ্য ফাঁসের পরিণতি
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফাঁসের ফলে আর্থিক অপরাধসহ পরিচয় চুরির (আইডেনটিটি থেফট) ঝুঁকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফাঁস হওয়া তথ্য দিয়ে যেকোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ব্যক্তিগত তথ্যভান্ডারে প্রবেশ করে ক্ষতিকর কাজ করতে পারে।
সরকারি অবস্থান
জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সির মহাপরিচালক আবু সাঈদ মো. কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার সতর্ক করা হলেও অনেকেই গুরুত্ব দিচ্ছে না।
সমাধানের পথ
সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অবিলম্বে তথ্য সুরক্ষা জোরদার করা, সংশ্লিষ্ট জনবলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং কার্যকর আইন প্রয়োগ করতে হবে। নিরাপত্তা নীতিমালা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন না করলে ভবিষ্যতে আরও বড় বিপদ আসতে পারে।
তথ্য ফাঁসের এই প্রবণতা দেশের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এখন সময়ের দাবি।