আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা: ঢাকার কঠোর প্রতিক্রিয়া
একই সঙ্গে এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
ত্রিপুরার আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলার ঘটনাকে “পূর্বপরিকল্পিত” হিসেবে অভিহিত করেছে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর “নিষ্ক্রিয়তা” নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভারত সরকারের কাছে ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং কূটনৈতিক মিশনের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বান জানানো হয়েছে।
ঘটনার বিবরণ
সোমবার দুপুরে হিন্দু সংঘার্ষ সমিতি নামে একটি ডানপন্থি সংগঠনের ডাকে বিক্ষোভকারীরা সহকারী হাই কমিশনের প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা প্রধান ফটক ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা নামিয়ে ফেলে এবং সম্পত্তি ভাঙচুর করে। ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বিবিসি বাংলার খবর অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা অবমাননার পাশাপাশি সাইনবোর্ড ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর মতো কর্মকাণ্ড ঘটায় তারা।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য অনুযায়ী, “স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উপস্থিত থাকলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুরু থেকেই নিষ্ক্রিয় ছিল।”
পটভূমি ও বিক্ষোভের কারণ
হামলার পেছনে ত্রিপুরার হিন্দু সংঘার্ষ সমিতির নেতৃত্বে একটি বড় বিক্ষোভের পরিকল্পনা ছিল। এটি মূলত বাংলাদেশে সনাতনী সম্প্রদায়ের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাশ ব্রহ্মচারীর গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানোর প্রতিবাদে আয়োজিত হয়েছিল।
ঢাকার কড়া প্রতিক্রিয়া
হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ সরকার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, “ঘটনা পূর্বপরিকল্পিত ছিল। এটি আন্তর্জাতিক নীতিমালা, বিশেষ করে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করেছে, যেখানে কূটনৈতিক মিশনের সুরক্ষা স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, “কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাই কমিশনে ২৮ নভেম্বরের সহিংস বিক্ষোভের ধারাবাহিকতায় আগরতলার এ ঘটনা ঘটেছে।”
ভারতের প্রতিক্রিয়া
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে হামলাকে “গভীর দুঃখজনক” বলে আখ্যা দিয়েছে এবং বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
আন্তর্জাতিক নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ
ঢাকা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, এ ধরনের হামলা ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে কূটনৈতিক মিশনের অলঙ্ঘনীয়তার নীতির সরাসরি লঙ্ঘন।
নিরাপত্তার আহ্বান
বাংলাদেশ সরকার ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে। একই সঙ্গে সকল কূটনীতিক ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
এই ঘটনা কেবল কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর চাপ তৈরি করেনি, বরং দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্কের প্রেক্ষাপটেও গুরুত্বপূর্ণ এক ইস্যু হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।