জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে সিটি স্ক্যান মেশিন বিকল, রোগীদের ভোগান্তি চরমে
রাজধানীর মহাখালীর জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে প্রায় চার মাস ধরে সিটি স্ক্যান পরীক্ষা বন্ধ। গত আগস্ট থেকে বিকল হয়ে পড়ে হাসপাতালের প্রধান সিটি স্ক্যান মেশিন। এতে রোগীদের চিকিৎসা পেতে দেরি হচ্ছে এবং তারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
মেশিন ক্রয় ও বিকলের পটভূমি
- ২০১৭ সালে ১১ কোটি ৫৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকায় একটি ১৬০ স্লাইসের সিটি স্ক্যান মেশিন কেনা হয়।
- সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান: ইরবিস ইঞ্জিনিয়ারিং বাংলাদেশ লিমিটেড।
- মেশিনটি ২০১৮ সালের জুলাই মাসে হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগে স্থাপন করা হয়।
- পাঁচ বছরের ওয়ারেন্টি শেষে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে ত্রুটি দেখা দেয় এবং ২০২৩ সালের আগস্টে এটি পুরোপুরি অকেজো হয়ে যায়।
মেরামতের জটিলতা
- ইরবিস ইঞ্জিনিয়ারিং এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে চুক্তির শর্ত নিয়ে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে।
- মেরামতে প্রয়োজন হবে ২ কোটি ৯৮ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।
- সরকারিভাবে চুক্তির গাইডলাইন অনুযায়ী, ইরবিসকে পাঁচ বছরের মোট খরচের ১০ শতাংশ পারফরম্যান্স সিকিউরিটি জমা দিতে হবে।
- ইরবিস প্রতিবছরের মেরামতের বিলের ১০ শতাংশ জমা দিতে রাজি থাকলেও পুরো পাঁচ বছরের ১০ শতাংশ অগ্রিম দিতে রাজি নয়।
বর্তমান পরিস্থিতি
- বিকল্প ব্যবস্থায়, হাসপাতালের রেডিও থেরাপি বিভাগের সিটি সিমুলেটর মেশিন দিয়ে সীমিত সংখ্যক রোগীর সিটি স্ক্যান করা হচ্ছে।
- হাসপাতালের রেডিওলজি বিভাগে প্রতিদিন ১৮-২০ জনের বেশি সিটি স্ক্যান করা সম্ভব নয়।
- দৈনিক প্রায় ৫০ জন রোগীর সিটি স্ক্যান প্রয়োজন হয়।
রোগীদের দুর্ভোগ
- সিটি স্ক্যানের জন্য অপেক্ষার সময় বেড়ে গেছে ১০-১২ দিন।
- আর্থিকভাবে সামর্থ্যবানরা বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সিটি স্ক্যান করাচ্ছেন, যেখানে খরচ ৫ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।
- হাসপাতালের সিটি স্ক্যান পরীক্ষা করতে খরচ ২-৪ হাজার টাকা।
- অধিকাংশ রোগী আর্থিক সমস্যার কারণে অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ভুক্তভোগীর অভিজ্ঞতা
ফরিদপুরের কৃষক হিরু মাতবর সিটি স্ক্যান করতে গিয়ে রেডিওলজি বিভাগ থেকে ৪ ডিসেম্বর আসতে বলা হয়েছে। তার ভাই কামরুল হাসান বলেন, “সিটি স্ক্যান রিপোর্ট ছাড়া ডাক্তার চিকিৎসা দিতে রাজি নন।”
পরিচালকের বক্তব্য
জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জাহাঙ্গীর কবীর জানিয়েছেন, “মেশিন মেরামতের জন্য মন্ত্রণালয়ে আলোচনা চলছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।”
সমাধানের প্রয়োজনীয়তা
- মেশিন দ্রুত মেরামত বা নতুন সিটি স্ক্যান মেশিন সংযোজন জরুরি।
- চুক্তির শর্তগুলো পুনর্বিবেচনা করে দ্রুত কার্যকর সমাধান নেওয়া প্রয়োজন।
- রোগীদের দুর্ভোগ লাঘবে বিকল্প ব্যবস্থা আরও উন্নত করা উচিত।
সরকারি প্রতিষ্ঠানের অব্যবস্থাপনা এবং দেরির কারণে হাজারো ক্যান্সার রোগী চিকিৎসা পেতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া না হলে এই ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।