December 22, 2024
উগ্রতা ছড়াচ্ছে পিনাকী

উগ্রতা ছড়াচ্ছে পিনাকী

নভে ২৬, ২০২৪

আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর, (ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র)

পিনাকী আর ইলিয়াসকে অনেক আগে থেকেই বয়কট করার কথা বলতেছি, স্পেশালি গণঅভ্যুত্থানে আমাদের জয়ের পর থেকে।

পিনাকীর একটা বিশাল মুরিদ শ্রেনী আছে। যার বেশিরভাগই অশিক্ষিত কিন্তু ধর্ম নিয়ে প্রচন্ড সেনসিটিভ। এ শ্রেনীটা সমাজের জন্য অনেক ভয়ের। এজন্য নয় যে, তারা ধর্মকর্ম পালন করে, বরং সবকিছুকে তারা ধর্ম দিয়ে জাস্টিফাই করে। ইসলাম নিয়ে তাদের জ্ঞ্যানের চেয়ে আবেগটা বেশি। ব্যাক্তি জীবনে ইসলামের চর্চা না থাকলেও ফেসবুকে ধর্মীয় চেতনা নিয়ে প্রচন্ড সরব। এজন্য পিনাকীর।মতন একজন স্বঘোষিত-নাস্তিক যখন তার ভিডিও কিংবা লেখাতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ কিংবা ‘ইনশাল্লাহ’ টার্মগুলো ইউজ করে তখন সে বুঝতে পারেনা যে তার সাথে ধর্মীয় শব্দ দিয়ে ‘প্রতারণা করা হচ্ছে’ বরং ইসলামিক শব্দ শুনেই তাকে আপন ভাবা শুরু করে দেয়। এই আপন করে ভাবাটা এখন গুরু লেভেলে নিয়ে গেছে। ‘হুমায়ুন আজাদের’ নাস্তিকতা তাদের কাছে খারাপ নাস্তিক কিন্তু পিনাকির নাস্তিকতা তাদের কাছে গুরুতূল্য! পিনাকী শুধুমাত্র তার কথা দিয়ে, কথাতে আওয়ামিলীগকে প্রচলিত গালিগালাজ, কিন্তু মবকে উত্তেজিত রাখতে ‘ইনশাল্লাহ’ ইউজ করে, সাধারণের পক্ষে যায় এমন আবেগগুলোকে ফুসলিয়ে দিয়ে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখছে, দিনের পর দিন!

একসময়ের বামপন্থী পিনাকী এখন পর্যন্ত প্রায় সব দলেরই দালালি করেছে, সমালোচনা করেছে, আবার ছেড়েও দিয়েছে। শুধুমাত্র জামাত ছাড়া। জামাতকে পিনাকি কখনোই ‘ধরেও নাই ছাড়েও নাই’। কিন্তু জামাতের রাজনীতির পক্ষে যায় এমন ন্যারেটিভ অনেক আগে থেকে সে প্রচার করে আসছে। তাই অনেকেই মনে করেন, পিনাকি মূলত জামাতের একজন পেইড এজেন্ট! যার প্রমাণ আমরা তার একটিভিটিতেও পাই!

পিনাকি যে মেধাবী এ নিয়ে আমার সন্দেহ নাই, পিনাকি যে হাসিনাশাহীর বিপক্ষে ন্যারেটিভ তৈরীতে নিরলস কাজ করে গেছে, সেটা নিয়েও আমার দ্বিমত নেই। কিন্তু তবুও পিনাকিকে আমাদের এখন ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে, কারন ব্যাক্তি নয়, সবার আগে দেশ!

পিনাকি ভেবেছিলো তাকে উপদেষ্টা করা হবে। তার কয়েকটা ইঙ্গিতপূর্ন ভিডিও/সাক্ষাতকারও আমরা দেখেছি। আর যখনি সেটা করা হলোনা, তখনি সে শুরু করে দিলো তার অস্ত্রটার ব্যবহার! কি সেই অস্ত্র?

শুরুটা হয়েছিলো সরাষ্ট্র উপদেষ্টা এম. সাখাওয়াত হোসেনকে পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে! হ্যা, জাস্ট একটা বক্তব্যের সূত্র ধরে সাখাওয়াত সাহেবের এগেইন্সটে একটা জনরোষ তৈরী করতে অনলাইনে আন্দোলন শুরু করেন পিনাকি। ফলও পেয়ে যান দ্রুত! এম. সাখাওয়াত হোসেনের মতন জাদরেল লোককে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়। অথচ মাত্র এক দিনের নোটিশে পুলিশ বাহিনীকে কাজে ফেরাতে বাধ্য করেছিলেন ব্রিগেডিয়ার সাখাওয়াত! কিন্তু একটা কথার সূত্র ধরে, এমন কিছু নাই মানুষ বলে নাই তারে!

আমি গত ১৮ বছর সাখাওয়াত হোসেনের একটিভিটি দেখেছি। আওয়ামি আমলে দেশে বসে যে কজন ‘উচিত কথা’ বলেছেন বিভিন্ন মিডিয়াতে এম সাখাওয়াত তাদের একজন।

পিনাকীর মতন লোকেরা দেশের বাইরে বসে আন্দোলনে উৎসাহ যুগিয়েছেন, আর এম সাখাওয়াতরা দেশে বসেই সেই ভুমিকাটা পালন করেছেন, তাও মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে! কিন্তু দেশের মানুষ সেই ভুমিকা মনে রাখেন নাই, তারা বিশ্বাস করেছে পিনাকীরে!

সম্প্রতি দেশ হয়ে উঠেছে আন্দোলনের উর্বর ভূমি। পরাজিত আওয়ামি শক্তি থেমে নেই প্রতিবিপ্লবের সুযোগ নিতে। এর মধ্যে ‘ধর্মপ্রাণ পিনাকি মুরিদ’রা নেমেছে প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার ভাঙতে। সাম্প্রতিক কোন তীব্র উস্কানি প্রথম আলো কিংবা ডেইলি স্টারে নাই। তবুও পুরোনো সব রিপোর্টের স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলোকে পাবলিশ করে জনমনে অসন্তুষ তৈরীর চেষ্টা করছে পিনাকীরা! এর সুযোগটা নিচ্ছে পরাজিত শক্তি। দেশ বিদেশে খবর হচ্ছে যে দেশের মৌলবাদিরা মিডিয়া হাউজ ভেঙ্গে দিচ্ছে। ফলে পরাজয় হচ্ছে, আমাদের, আমাদের বিপ্লবীদের!

৫ই আগস্ট পরবর্তী সময়ে প্রথম আলো’র শব্দ চয়ন নিয়ে সমালোচনা করে আমি নিজেও অন্তত ২টা লেখা লিখেছি। প্রথম আলোকে আমরা বয়কট করতে পারি, ইত্তেফাক, যুগান্তরের মতন জাদরেল পত্রিকা আজকাল আলোচনায় নেই, হারিয়ে গেছে, দালালি করলে সকল পত্রিকাই হারাবে, সময়ের প্রয়োজনেই গ্রহনযোগ্যতা হারাবে। কিন্তু বয়কট কিংবা প্রতিবাদের নামে কার্যালয় ভাঙচুর কোন সমাধান নয়, অফিসের সামনে যেয়ে অহেতুক উস্কানি কোন গণতান্ত্রিক আচরণ নয়। মিডিয়া হাউজের টুটি টেনে ধরাই হলো ফ্যাসিবাদ! আর সেই ফ্যাসিবাদকে মব দিয়ে উস্কে দিচ্ছে পিনাকি আর ইলিয়াসরা। কখনো ইস্কন, কখনো আবার ভারতবিরোধীতার মতন জনপ্রিয় সব টপিকে প্রচন্ড উস্কানি দিয়ে মানুষের চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে রাখছে তারা। দেশের জন্য যা মোটেও সুখকর কিছু নিয়ে আসবে না!

৫ই আগস্টের পর দরকার ছিলো একটা ঐক্যমতের, যেটা নিয়ে এ সরকার কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু আমরা বিভক্ত হয়ে গেলাম। আমরা নিজেদের লাভ গোছাতে ব্যাস্ত এখনো। আর লাভের অংশ না পেলেই, ধর্মীয় অস্ত্রটাকে ব্যবহার করে, লাগিয়ে দিচ্ছি নৈরাজ্য!

এ নৈরাজ্যের পিতা, জনাব পিনাকী মবট্রার্যকে দ্রুত থামানো হোক! তার সকল কনটেন্ট জাতীয় নিরাপত্তার জন্যই প্রচারণা সীমিত করা হোক। কারণ সবার আগে দেশ, দেশের মানুষ, আর মানুষের ভালো থাকা! পিনাকীর মতন পেইড এজেন্টদের দ্বারা আপনার আমার সংগ্রাম, ২ হাজার শহীদের রক্ত, ৪৫ হাজার আহতের পঙ্গুত্ব বরণ করে নেয়াকে আমরা মব দিয়ে খু/ন করে ফেলতে পারিনা। আমাদের বিপ্লবকে বেহাত হতে দিতে পারিনা! তাই, খুবই, খুব, খুউব সাবধানে!

বাকিটা আমার কথা কিংবা লেখা নয়, আপনার বিবেকবোধের বিবেচনা!

Leave a Reply